মাহমুদা আফরোজ বিথী : সময়ের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণগুলিও বদলে গেছে।একসময় ধরেই নেওয়া হত যে স্ত্রীর কর্তব্য বাড়ি বসে সংসার সামলানো। তবে এখন ঘরে বসে সংসারের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই পুরুষও!
আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের কনসেপ্টটাও অনেক বদলে গিয়েছে। আগে যেখানে মনে করা হত সাংসারিক দায়দায়িত্ব মহিলাদের আর স্বামীদের কাজ শুধুই অফিসে সীমাবদ্ধ, সেখানে আজ এই ভাবনাটা একেবারেই অচল। এখন কিন্তু শুধুমাত্র মহিলারাই মাল্টিটাস্কিং করেন না, পুরুষরাও ক্রমশ ঘর অফিস সামলানোয় পরিপক্ক হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে এই অতিমারির সময়ে। লকডাউন আর করোনা আমাদের প্রত্যেককে বুঝিয়ে দিয়েছে, কোনও কাজই স্রেফ পুরুষদের বা মহিলাদের নয়। দেওয়ালে পিঠ ঠেকলে সবাইকেই সব কাজ করতে হয়। আর তাই এখন স্বামীরা নিজেরাই এগিয়ে এসে স্ত্রীদের সঙ্গে কাজের ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন। স্ত্রী যদি রান্না করছেন তো স্বামী কাপড়জামা তুলে রাখছেন, স্ত্রী বাজার করতে গিয়েছেন, এই ফাঁকে স্বামী বাচ্চাদের হোমওয়র্ক করিয়ে রাখছেন। আর এমনটাই তো হওয়া উচিত। যাঁরা একটু পুরনোপন্থী, তাঁদের হয়তো এই ডিভিশন অফ লেবারটা ভাল লাগবে না। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, মেয়েরা যদি ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাইরের কাজ করতে পারে, তা হলে ছেলেরাই বা কেন ঘরের কাজে সাহায্য করতে পারবে না। সংসার চালানোর দায়িত্ব স্বামী-স্ত্রীর ওপর সমানভাবে বর্তায়। আর এটা যদি প্রত্যেকেই উপলব্ধি করতে পারেন, তা হলে এতে সংসারেরই মঙ্গল হয়। আর যেখানে আমরা জেন্ডার ইকুয়ালিটি নিয়ে এত সোচ্চার, সেখানে স্বামী বা স্ত্রীর ভূমিকা কোন নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে বেঁধে দেওয়াটা নেহাতই বোকামি।
ছেলে মানেই ঘরোয়া কাজে তার রুচি থাকবে না, এই ধারণাটা তাই বদলে ফেলার সময় এসেছে। ইন ফ্যাক্ট আমি এরকম অনেকেই চিনি যাঁরা বাড়ির কাজ করা পছন্দ করেন। কেউ রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালবাসেন তো কেউ ঘর সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে। কেউ কেউ আবার দোকান বাজার নিয়ে ভীষণ খুঁতখুঁতে। যতক্ষণ না নিজে বেছে শাক-সবজি, মাছ-মাংস কিনে আনছেন, ততক্ষণ স্বস্তি পান না। এমনকী এরকম বহু পরিবার আছে যেখানে স্ত্রীর থেকে স্বামী ঘরের কাজ করায় অনেক বেশি দক্ষ। তাই, যদি মনে করা হয় যে ছেলেরা ঘরের কাজ করা মানেই তা স্বভাববিরোধী বা ‘মেয়েলি’, তা হলে তা একেবারেই ভুল ভাবা হবে। সুতরাং পুরনো বস্তাপচা ধ্যানধারণাকে এবার একটু পাল্টে দেখুন। শুধু একটু খেয়াল রাখতে হবে যে ভালবেসে সদয় গৃহস্থ স্বামী অনেক কিছু করে দিচ্ছেন বলে, তিনি যেন ‘টেকেন ফর গ্র্যান্টেড’ না হয়ে যান। বরং তিনি যে এগিয়ে এসে আপনাকে সাহায্য করছেন, সেই ব্যাপারটাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করুন। আর এখানেই তো স্বামী-স্ত্রীর সম্পকের্র সৌন্দর্য।