প্রবাহবার্তা : কৃষি শিক্ষা একটি কর্মমূখী জনকল্যানধর্মী অত্যাবশ্যকীয় শিক্ষা। যা মানব সভ্যতাকে টিকে রাখতে একান্ত প্রয়োজন। এমনকি অধুনাকালের গ্রীনহাউজ গ্যাস কমিয়ে রাখতে জৈব ও প্রান বৈচিত্রময় কৃষির জন্য ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার সম্প্রসারন প্রয়োজন।
স্বাধীনতা পূর্ব মাঠ পর্যায়ে কৃষি প্রযুক্তিগত শিক্ষার তেমন কোনো সম্প্রসারন ছিল না। তাই খাদ্য ঘাটতিও ছিল প্রকট। বিগত শতাব্দীর শেষ ভাগ হতে অত্রাঞ্চলে কৃষি বিভাগের কার্যাবলি ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং কৃষি সম্পর্কীয় গবেষনা, শিক্ষা ও প্রদর্শন কাজগুলো পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠান ও খামার প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। কৃষি বিভাগ ও খামার পর্যয়ে উচ্চ পদে নিয়োগের জন্য দেশ বিদেশ হতে কৃষিতে উচ্চ শিক্ষা প্রাপ্ত লোক পাওয়া গেলেও নিম্ন ও মাঠ পর্যায়ের জন্য মধ্যম ও স্বল্প মেয়াদী কোর্সের শিক্ষা সম্পন্ন জনবলের বড় ঘাটতি ছিল। ১৯১৯ সালে এক সরকারি আদেশে ঢাকায় কৃষি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম দিকে অষ্টম শ্রেনী মানের ছাত্রদের কৃষি স্কুলে ভর্তি করা হতো। পরবর্তীতে ন্যুনতম যোগ্যতা নির্ধারিত হয় ম্যাট্রিকুলেশন পাশ। কৃষি মন্ত্রনালয়াধীন কৃষি সম্প্রসারন ও ব্যবস্থাপনা (ডিএইএন্ড এম) বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত ১১ টি কৃষি প্রশিক্ষন প্রতিষ্ঠানে ১৯৫৮ সাল হতে নিয়মিত ভাবে ১ ও ২ বছর মেয়াদি ইন সার্ভিস সার্টিফিকেট কোর্স চালু হয়ে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ছিল। ১৯৮৯ সালে প্রথম ৩ বৎসর মেয়াদী শুধু ফসল ভিত্তিক কৃষি ডিপ্লোমা কোর্স ৪ টি প্রতিষ্ঠানে প্রবর্তন করা হয়। ১৯৯৩-৯৪ সনে কৃষি সম্পসারন অধিদপ্তরের (ডিএই) ১১ টি প্রতিষ্ঠানে ১ ও ২ বছর মেয়াদী প্রশিক্ষন প্রাপ্তদের ৩ বছর মেয়াদী মেকআপ কোর্সে প্রবর্তন করে ১৯৯৫-৯৬ পর্যন্ত চলমান ছিল। অন্যদিকে ১৯৯৫-৯৬ সনে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় কৃষি শিক্ষাকে আবশ্যিক করায় একসাথে বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায়, দ্রæত বেশি সংখ্যক শিক্ষক স্বল্পতম সময়ে তৈরির জন্য ১৯৯৬-৯৭ সনে দূর শিক্ষন পদ্ধতিতে ৩ বছর (৬ সেমি.) মেয়াদী কৃষি ডিপ্লোমা কোর্স সরাসরি ১৩ টি এটিআইতে চালু করা হয়, যা ছিল বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বাকাশিবো) এর একাডেমিক নিয়ন্ত্রনে। ১৯৯৭ সন হতে বেসরকারি পর্যায়ে উক্ত কোর্স পরিচালনার ও অনুমোদন দেওয়া শুরু হয় এবং এযাবৎ ১৬২ টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। অন্যদিকে ডিএই তার মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষনের জন্য স্থাপিত ১৮ টি প্রতিষ্ঠানেও কৃষি ডিপ্লোমা কোর্স চালু রেখেছে, যা ১৯৯৬-৯৭ সনে বিশেষ প্রয়োজনে চালু করা হয়েছিল। কোর্সের মানের জন্য তৎকালীন শিক্ষা সচিব জনাব এরশাদুল হক এর স্বাক্ষরিত সমন্বয় মিটিং এ সিদ্ধান্ত ছিল বলে জানি যে ডিএই মৎস্য ও পশু পালন চিকিৎসা বিষযের জন্য শিক্ষক নিয়োগ বা প্রেষনে নিবে। আমরা জানি যে একাডেমিক কোর্স পরিচালনা করা ডিএইর মূল কাজ নয়। অন্য দিকে বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষা বিষয় আবশ্যিক হিসেবে ও অর্ন্তভুক্ত নাই। ডিএইর বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক ব্যবস্থাপনা যেহেতু হয় নাই, এমনকি প্রফেশনাল শিক্ষকও তৈরির ব্যবস্থাপনা যেহেতু হয় নাই, সেহেতু শিক্ষা মান উন্নত ও সমতা করার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো একই ছাতার নিচে আনয়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করি। প্রফেশনাল শিক্ষক তৈরি ও বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সুযোগ অব্যহত আছে। পলিটেকনিকসহ অন্যান্য বিভিন্ন মেয়াদী কোর্স বাকাশিবো ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ব্যবস্থাপনা করে থাকে। তাই ডিএইর প্রতিষ্ঠান গুলো অনুরূপ ব্যবস্থাপনায় নেওয়া যেতে পারে অথবা কৃষির বিভিন্ন মেয়দী অর্থাৎ ট্রেড কোর্স বা সার্টিফিকেট কোর্স করে কৃষি শিক্ষা বোর্ড করা যেতে পারে। তাহলে শিক্ষন-শিখন পদ্ধতি, মূলায়ন, মনিটরিং, পরীক্ষা গ্রহন, প্রফেশনাল শিক্ষক তৈরি, বেতন-ভাতা ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা একইমানে করা সম্ভব হবে। বর্তনানে ডিএই তার মাঠপর্যায় হতে স্বল্প মেয়াদে এটিআইতে কর্মকর্তাদের প্রেরন করে, আবার যখন-তখন ফেরৎ আনে, ফলে প্রফেশনাল শিক্ষক তৈরি হয় না। যা মানসম্পন্ন শিক্ষা পরিচালনার জন্য অন্তরায় বলে মরে করি। কাজেই শিক্ষার মানের সমতা রাখার জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর ব্যবস্থাপনা একই ছাতার নিচে নেওয়া জরুরী।
মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন ভূঞা
মহাসচিব
বাংলাদেশ বেসরকারি কৃষি ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট এসোসিয়েশন, ঢাকা।