প্রবাহবার্তা: ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের (১৪৭৫৭০ বর্গ কিলোমিটার) প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১১৬ জন লোকের বসবাস। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১,৩৭ জন। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাহিদা পূরণে, শিল্প কারখানা প্রসারে,নানামুখী উন্নয়নের জন্য ভৌতকাঠামো নির্মাণসহ প্রভৃতি কারণে প্রতিনিয়ত অব্যাহতভাবে চাষযোগ্য জমি ও বনাঞ্চল কমে যাচ্ছে যা আর উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।
এ সময়ে জমিতে দুষণমাত্রা বৃদ্ধি,বৈশ্বিক জলবায়ুগত পরিবর্তনের প্রভাব,লবণাক্ত এলাকা বৃদ্ধি ইত্যাদি যা কৃষি তথা খাদ্য উৎপাদনকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। পৃথিবীর সকল উন্নত ও উন্নয়নকামী দেশ তার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রথম ধাপে কৃষি তথা খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়েছে।
স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তীতে বেশ সময়কাল এদেশে কৃষিতে জনশক্তি প্রায় ছিলই না বলা যায়। যার ফলশ্রুতিতে খাদ্য আমদানি নির্ভর ছিল এ দেশ ,অথাৎ একটি ক্ষুধার্ত জাতি ছিলাম আমরা। এ প্রসংঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমান একটা অত্যান্ত মূল্যবান কথা এভাবেই বলেছিলেন যে, দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা চলবে না । জমির সুষ্ঠ উৎপাদনমূখী ব্যবহারের জন্য কৃষির প্রযুক্তিগত জ্ঞান সম্প্রসারণের প্রয়োজন বলে তিনি ব্যক্ত করেছিলেন।
শিক্ষা মন্ত্রালয় কারিগরি শিক্ষা অদিদপ্তর ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঢাকা কর্তৃক জাতীয়ভাবে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সময়োপযোগী কর্মমুখী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বাস্তবায়নে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে । যার ফলে সাধারন শিক্ষার তুলনায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ১৪% হতে ২০২১ সারে ২০% এ উন্নীত হবে । যা বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরীতে অবদান রাখবে।
কৃষি ডিপ্লোমাও একটি কারিগরি ও কর্মমূখী শিক্ষা যা সম্প্রসারণের মাধমে সম্পদের অর্থবহ ব্যবহারে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে,দারিদ্র ও বেকারত্ব বিমোচনে,নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরীসহ বৈদেশিক বাজার সৃষ্টিতে ও কৃসিপণ্য আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে প্তোনি বৃদ্ধি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অন্যন্য ভূমিকা রাখবে।
কৃষির প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রয়োগের ফলে পরিবেশ রক্ষাসহ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধান করে লাগসই,যুগসই ওটেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ১৯৫৪ সালে কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৯৭ সাল হতে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর অধীনে দেশে প্রথম বেসরকারী পর্যায়ে কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষাক্রম চালু হয় (কৃষিতে মধ্যম স্তরের দক্ষ কারিগরি জনশক্তি তৈরীর শিক্ষা) । দেশে বর্তমানে কৃষি মন্ত্রায়লয়াধীন ১৬টি প্রতিষ্ঠানসহ সর্বমোট ১৮২টি প্রতিষ্ঠানে কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষাক্রম চলমান আছে।
বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি আনুকুল্য না পাওয়ায় ও এমপিওভুর্ক্তি না হওয়ায় এ যাবৎ অনেক দৈন্যদশার মধ্যে দিযে অতিবাহিত হয়েছে/হচ্ছে, অথচ এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান হতেই গড়ে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার মধ্যম স্তরের কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি বের হচ্ছে, যারা সরকারি জাতীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডে ভূমিকা রাখছে।
এমনই এক সময়ে বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার শক্তিশালী ও সুদৃঢ় অর্থনীতির কাঠামো গঠনে প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে সেজন্য এমপিওভুক্তিকরণ শুরু করেছে। তাই বাংলাদেশ বেসরকারি কৃষি ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট এসোসিয়েশনের পক্ষ হতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
আমরা জানি ১৯৭১ পূর্ববর্তী ও তৎপরবর্তীতে বেশ কয়েক বৎসর এদেশ একটি খাদ্য ঘাটতি তথা খাদ্য আমদানি নির্ভর দেশ ছিল। অথচ কৃষির ন্যায় কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের ফলে খাদ্যে ঘাটতির দেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে । আমি বিশ্বাস করি সরকারের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্থাৎ ভিশন ২০২১ এবং ২০৪১ সালের রুপকল্প বাস্তবায়নে যে সমস্ত ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে তার মধ্যে কারগিরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত যথার্থ জ্ঞান ও দক্ষতায় সমৃদ্ধ সঠিক মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে গড়ে ওঠা বিশেষ মানুষ।
যার অন্যতম হলো কৃষি শিক্ষায় শিক্ষত মধ্যম স্তরের দক্ষ জনশক্তি । বাংলাদেশ যেহেতু কৃষি প্রধান অর্তনীতি নির্ভর একটি জনবহুল দেশ। সেহেতু জনগনকে সত্যিকার জ্ঞান ও দক্ষতায় সমৃদ্ধ করে গড়ে তুরতে হলে কৃষির ন্যায় কারিগরি,বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের কোন বিকল্প নেই।
কারিগরি ও কর্মমূখী শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ মানব সম্পদ বাংলাদেশকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিনত করতে সক্ষম হবে। যতদূর জানি ২০৩০ সালে জনসংখ্যাগত নির্ভরশীলতা অনুপাত হবে সর্বনিম্ন অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ কর্মক্ষম জনসংখ্য হবে এদেশে । এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে একমাত্র কারিগরি,কর্মমূখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের আওতায় আনার মাধ্যমেই জনসম্পদ তথা জনশক্তিতে রুপান্তর করা সম্ভব।
যার মধ্যে অন্যতম হলো কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষাতক্রম। এ শিক্ষা জনগনের দোরগোড়ায় পৌছবে এবং যুব সমাজের কাছে জনপ্রিয়তা পাবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
লেখক : মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন ভুঞা
মহাসচিব
বাংলাদেশ বেসরকারি কৃষি ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট এসোসিয়েশন,ঢাকা,বাংলাদেশ ।