দৈনিক প্রবাহবার্তা প্রতিবেদন : আদালত অবমাননার মামলায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলামকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি কে এম রবিউল হাসান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার ডিসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাকে সতর্ক করছি। এখন থেকে ডিসি অফিসের দরজা-জানালা খোলা (অফিস সময়ে) রাখবেন। যেন জনগণ আপনাদের চেহারা দেখতে পায়। আপনার দরজা-জানালায় ভারী পর্দা ব্যবহার করবেন না।
গত ১১ আগস্ট আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি ১৫ কোটি টাকায় নিলামে বিক্রি করার ঘটনায় ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসাইন, কুষ্টিয়ার ডিসি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, এসপি মো. খায়রুল আলম, সদর থানার ওসি মো. সাব্বিরুল আলম ও নিলামে সম্পত্তি নেওয়া ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদকে তলব করেন হাইকোর্ট। আদেশ অনুসারে আজ করোনায় আক্রান্ত কুষ্টিয়ার সদর থানার ওসি মো. সাব্বিরুল আলম ছাড়া অন্য সবাই আদালতে হাজির হন।
হাইকোর্ট আরও বলেন, ডিসি হলো সরকারের হার্ট। আপনাকে জনগণের জন্য সেভাবে কাজ করতে হবে। অথচ ডিসি অফিসে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। আপনারা একটা দরখাস্ত পর্যন্ত রিসিভ করেন না। এখন থেকে কোনো ধরনের উন্নাসিক আচরণ করবেন না। নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভালো কাজ করলে দেশ ও জনগণ উপকৃত হবে।
আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি ১৫ কোটি টাকায় নিলামে বিক্রির ঘটনায় হাইকোর্ট ডিসিকে বলেন, কোথাও চুরি-ডাকাতি হচ্ছে, সরকারি সম্পত্তি দখল হয়ে যাচ্ছে, অভিযোগ না পেলে কি আপনি বসে থাকবেন? বসে থাকার সুযোগ নেই।
পরে আদালত কুষ্টিয়ার ডিসি সাইদুল ইসলামকে আদালত অবমাননার মামলায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। এছাড়া আদালত অবমাননার ঘটনায় জারি করা রুলের শুনানির জন্য আগামী ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ওইদিন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও নিলাম করা সম্পত্তি গ্রহণকারী ব্যবসায়ীকে আদালতে হাজির থাকতে হবে। আর করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ওসি মো. সাব্বিরুল আলমকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আদালতে ডিসি ও এসপির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান ও ইউসুফ খান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের এমডির পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ মিনহাজুল হক ও ব্যবসায়ী শফিকুলের পক্ষে রাগীব রউফ চৌধুরী। পরে রাগীব রউফ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, শফিকুল ইসলামের করা রিটের প্রেক্ষিতে গত ২ আগস্ট হাইকোর্ট শর্তসাপেক্ষে নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিতের আদেশ দেন। শর্ত হিসেবে শফিকুলকে ৩০ দিনের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকে ২০ কোটি টাকা জমা দিতে এবং ৬ কোটি টাকা ১২ মাসে সমান হারে পরিশোধ করতে বলা হয়। ওই আদেশ থাকার পরও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় ৫ আগস্ট ভোরে শফিকুলের সম্পত্তির দখল নেন নিলাম ক্রেতা রশিদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী। এ পরিস্থিতিতে শফিকুল আদালত অবমাননার আবেদনটি করেন।