প্রবাহবার্তা প্রতিবেদন : প্রশ্নফাঁসের কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হচ্ছে। বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিবের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়।উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মাউশির ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। দু- একদিনের মধ্যে এই ঘোষণা আসতে পারে।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক গনমাধ্যমকে বলেন, সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পরীক্ষা বাতিলের চিন্তা-ভাবনা করছি। পরে বিষয়টি মাউশিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ (বৃহস্পতিবার) পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা আসবে।এদিকে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাত দেড়টায় রাজধানীর বড় মগবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয় পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রভাষক (৩৪তম বিসিএস) রাশেদুল ইসলামকে। এর তিন ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় গ্রেফতার করা হয় মাউশির উচ্চমান সহকারী আহসান হাবীব, অফিস সহকারী নওশাদুল ইসলামকে। মূলত তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই রাশেদুল গ্রেফতার হন।
এর আগে খেপুপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ও পরীক্ষার্থী সুমন জমাদ্দার গ্রেফতার হন। রাশেদুলের কর্মস্থল পটুয়াখালী সরকারি কলেজের কম্পিউটার অপারেটর সুমন।ডিবির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার ওই কর্মকর্তা পরীক্ষার দিন মাউশি থেকে কয়েকটি কেন্দ্রে যাতে নির্বিঘ্নে প্রশ্ন পৌঁছে যায় তা দেখভাল করেছিলেন।
ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, তবে প্রশ্নপত্র তৈরির সময় ফাঁস হয়নি। প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কেন্দ্রে বিতরণের সময়।পরীক্ষা শুরুর আগেই অনেকের হোয়াটস অ্যাপে উত্তরপত্র চলে যায়। শুক্রবার সাড়ে ১১টার দিকে প্রশ্নপত্র সব কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরীক্ষা শুরু হয় বিকেল ৩টায়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ গনমাধ্যমকে বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের পুরো চক্রকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। এই জালিয়াতিতে কার কী ভূমিকা ছিল এটা এখন স্পষ্ট।
ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সুমন জমাদ্দার ও সাইফুল ইসলাম দু’জন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেকের নাম জানান। প্রশ্ন ফাঁস, উত্তরপত্র তৈরি ও তা অন্যদের কাছে পাঠানোর কাজে কার কী ভূমিকা ছিল তাদের তথ্য প্রকাশ করে জবানবন্দি দিয়েছেন তারা।প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় আরও ৫-৬ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন।
জানা গেছে, সুমন জমাদ্দার পটুয়াখালী সরকারি কলেজে কম্পিউটার অপারেটর। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সূত্র ধরে তার সঙ্গে শিক্ষক রাশেদুলের পরিচয়। মাউশির পরীক্ষার অংশ নেওয়ার আগে চাকরির বন্দোবস্ত করতে রাশেদুলের শরণাপন্ন হন। এরপর সাইফুল নামে একজনের মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখেন। তার সঙ্গে যোগসূত্র পাওয়ায় ডিবি পুলিশ রাশেদুলকে গ্রেপ্তার করে।জানা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রাশেদুলের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। বরগুনার আমতলীতে তার শ্বশুর বাড়ি। পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. নুরুল আমীন বলেন, রাশেদুল জরুরি কাজে ঢাকা যাওয়ার কথা জানিয়ে ১৮ মে পর্যন্ত ছুটি নেয়। ১৯ মে কলেজে তার যোগদান করার কথা ছিল। পরে পত্রিকা দেখে জানতে পারি রাশেদুল ও সুমন প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত। এটা দুঃখজনক ও লজ্জার।
পরীক্ষা বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গনমাধ্যমকে বলেন, আমরা পরীক্ষাটি বাতিলের দিকে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে পরীক্ষা কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজকে আর সময় নেই। মিটিং করে কাল (বৃহস্পতিবার) তারা সিদ্ধান্ত জানাবেন।
তিনি আরও বলেন, মাউশির একজন কর্মকর্তার ব্যাপারে এখন নানান কথা শুনছি। এতদিন কেউ কিছু বলেননি। সবকিছুই আমরা গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিচ্ছি। তাদের ব্যাপারে অবশ্য ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়। আর পুলিশের প্রতিবেদন পাওয়ার পরে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তসহ অন্য দাপ্তরিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। , সাইফুল ইসলামকে ইতিমধ্যে স্কুল বরখাস্ত করেছে।
৫১৩টি পদে নিয়োগের লক্ষ্যে রাজধানীতে ৬১ কেন্দ্রে গত ১৩ মে এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রার্থী ছিলেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৪ জন। এক ঘণ্টার এই পরীক্ষার এমসিকিউ পদ্ধতিতে ৭০টি প্রশ্নের সবকটি ফাঁস হয়েছে।
মাউশি এই যাত্রায় ২৬টি পদে ৪ হাজার হাজার ৩২ (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির) কর্মচারী নিয়োগ করবে। ইতোমধ্যে আরও চারটি পরীক্ষা হয়েছে। মাউশির অভিযুক্ত ও গ্রেফতার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগের পরীক্ষাগুলোতেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন সেইসব পরীক্ষা নিয়েও কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করছেন। এই নিয়োগের ষষ্ঠ ও শেষ ধাপের পরীক্ষা আগামী ৩ জুন নেওয়ার কথা আছে। ‘হিসাব সহকারী’ পদে ১০৬ জন নিয়োগ করা হবে। এই পদে প্রায় ৭৩ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছেন।
উল্লেখ্য, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ইডেন কলেজের প্রধান সহকারী মো. আব্দুল খালেক বাদী হয়ে লালবাগ থানায় ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনের ধারায় মামলা করেছেন। এতে সুমন, পলাতক সাইফুল ও খোকনসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।