দৈনিক প্রবাহবার্তা প্রতিবেদন : মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড আয়োজন করছে। এ আয়োজনের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে মাতৃভাষা চর্চা, প্রচার ও প্রসার ঘটানোই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট-এর মূল লক্ষ্য। সকাল ৯:৩০ ঘটিকায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় এবং বেলুন উড়িয়ে লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড–এর শুভ উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. হাকিম আরিফ, মহাপরিচালক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবদুন নূর মুহম্মদ আল ফিরোজ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়; মোঃ নজরুল ইসলাম, যুগ্মসচিব (প্রশাসন অধিশাখা), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়; ড. সিকদার মনোয়ার মুর্শেদ, অধ্যাপক, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, চেয়ারম্যান, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. জেনিফার জাহান, সহযোগী অধ্যাপক, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; তাওহিদা জাহান, সহযোগী অধ্যাপক, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড-এর সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান উপপরিচালক (কলেজ-১), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর; আজগর আলী, প্রতিনিধি, বাংলাদেশ টেলিভিশন; মো. সেলিম মিয়া, প্রতিনিধি, বাংলাদেশ লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড সোসাইটি; আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এর উপপরিচালক মো: আবদুল কাদের এবং নিগার সুলতানা, সহকারী পরিচালক পুলক কুমার ধর এবং লুৎফর রহমান খান। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মোঃ আমিনুল ইসলাম, পরিচালক (ভাষা, গবেষণা ও পরিকল্পনা) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, প্রধান অতিথি ও সভাপতির বক্তব্যের পর প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।প্রধান অতিথি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. হাকিম আরিফ বলেন- জাতীয় পর্যায়ে আজকের এই চূড়ান্ত পর্যায়ে আগত শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সবাইকে স্বাগত জানাই। এই আয়োজনের বড় লক্ষ্য হচ্ছে মাতৃভাষাকে ভালোবাসা। আমরা সবাই নিজের মাতৃভাষাকে ভালোবাসি কিন্তু এই প্রিতিষ্ঠানের একটি বড় উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীর প্রায় ৭ হাজার মাতৃভাষাকে ভালোবাসা। তার অংশ হিসেবে এই লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড-এর আয়োজন। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাংলাসহ অন্যান্য মাতৃভাষা চর্চার প্রতি নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিপন্ন ভাষা পুনরুদ্ধার, বিকাশ ও নথিবদ্ধকরণের কাজে এ প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত আছে। জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মাতৃভাষা চর্চার প্রতি গুরুত্ব অনস্বীকার্য বলে মনে করি।
বিশেষ অতিথি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব আবদুন নূর মুহম্মদ আল ফিরোজ বলেন- ২১শের মাসে স্মরণ করছি জাতির পিতা এবং ভাষা শহিদদের যাদের আত্মত্যাগের জন্য আমরা একটি শহিদ মিনার পেয়েছি। আজকের এই চমৎকার আয়োজনের জন্য আমাই মহাপরিচালক ও লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড-এর কমিটিকে ধন্যবাদ। আজকের এই চূড়ান্তপর্বে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা বিজয়ী হবে সেই ৬জনকে অগ্রিম অভিন্দন এবং তোমাদের সবার মাধ্যমে মাতৃভাষার প্রতি সচেতনতা সবার মাঝে সঞ্চারিত হবে। নিশ্চই আগামিতে আমাই এই আয়োজন আরও বর্নিল করবে এ আশাবাদ ব্যাক্ত করে এ আয়োজনের সফলতা কামনা করি।
বিশেষ অতিথি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (প্রশাসন অধিশাখা) জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন- এই আয়োজনের সাথে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ বিশেষকরে আমাই মহাপরিচালককে ধন্যবাদ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই আয়োজন করার জন্য। যদিও বিশ্বে লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড শুরু হয় ২০০৩ সালে। মাতৃভাষাকে সবার কাছে সুধার মতো লাগে, মাতৃভাষা বেঁচে থাকে ব্যবহারের মাধ্যমে। ভাষার সম্মান পায় সঠিক, সুষ্ঠু ও পরিশীলিত ব্যবহারের মাধ্যমে। মাতৃভাষা চর্চা করবো, সম্মান করবো, এর মাধ্যমে ভাষা বেঁচে থাকবে। যাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে মাতৃভাষা পেয়েছি তাহলেই তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হবে।
বিশেষ অতিথি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সিকদার মনোয়ার মুর্শেদ বলেন- আজকের এই চমৎকার আয়োজনের জন্য আমাই মহাপরিচালককে ধন্যবাদ। ভাষার মাসে স্মরণ করছি ভাষা শহিদদের এবং জাতির পিতাকে। এই আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের মাতৃভাষা এবং পৃথিবীর সকল মাতৃভাষার প্রতি শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা তৈরি হবে। আমরা আমাদের মাতৃভাষা যেমন শুদ্ধভাবে শিখবো তেমনি পৃথিবীর সকল মাতৃভাষা শুদ্ধভাবে শিখবো। এটিকে আমরা পরীক্ষা হিসেবে নয়, পরীক্ষা পরীক্ষা খেলা হিসেবে নিবো।বিশেষ অতিথি, ভাষা বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড সারাদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। দেশে সংগঠিত প্রথম এ আয়োজন চূড়ান্তপর্ব উৎসবমূখর হয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এ লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীরা মাতৃভাষাচর্চা ও অনুশীলনে আরও সচেতন হবে বলে আমার বিশ্বাস।
উপপরিচালক (প্রকাশনা, প্রচার, তথ্য ও জনসংযোগ) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মোঃ আবদুল কাদের সাংবাদিকদেরকে উদ্দেশ্যে বলেন- লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের ৫টি অঞ্চলের ৬টি ভেন্যুর বিজয়ীদের মোট ১৫২জন আজকের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে। লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের ৫টি অঞ্চলের ৬টি ভেন্যুর রেজিস্ট্রেশন করা প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীকে এবং আজকের চূড়ান্ত বিজয়ী ২ ক্যাটেগরিতে ৩ জন করে মোট ৬ জনকে অভিনন্দন। এই ৬ জন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে একুশের অনুষ্ঠানমালায় (২১শে ফেব্রুয়ারি) পুরস্কার গ্রহণ করবেন এবং এই ৬জন এ বছর ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের জন্য বিবেচিত হবেন। তাদের সবার মাধ্যমে আমাদের মাতৃভাষাসহ পৃথিবীর সকল মাতৃভাষার প্রতি সঠিক ও শুদ্ধভাবে উচ্চারণ, সচেতনতা ও ভালোবাসা সবার মাঝে সঞ্চারিত হবে।
পরীক্ষা এবং সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীবৃন্দ ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর প্রদান করে ফলাফল ঘোষণা করেন এবং সভাপতি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।