প্রবাহবার্তা ডেস্ক :রহস্যেঘেরা এক নাম আজিজ মোহাম্মদ ভাই। ধনাঢ্য এই ব্যবসায়ী অর্ধশতের মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে চলচ্চিত্রাঙ্গণেও একটা সময়ে দাপট খাটিয়েছেন। বহুল আলোচিত চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে আজিজ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে। তবে তা প্রমাণিত নয়। সালমান শাহর মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই ১৯৯৮ সালে ঢাকার একটি ক্লাবের নিচে হত্যার শিকার হন ঢাকাই ছবির আরেকজন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। এবারও চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যার জন্য অভিযোগের তীর যায় আজিজ মোহাম্মদের দিকে। হত্যা, মাদক পাচারসহ একাধিক গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ সত্ত্বেও বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
আজিজ মোহাম্মদ থাইল্যান্ডে থাকেন। সালমান শাহর স্ত্রী সামিরাও থাকেন থাইল্যান্ডে। এসব নিয়ে অনেক কানাঘুষা থাকলেও আজিজ মোহাম্মদ সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকেছেন। শোনা যায়, সালমান শাহ মারা হওয়ার আগে একটি পার্টিতে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে চুমু দেন আজিজ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সবার সামনে আজিজ মোহাম্মদের গালে থাপড় মেরে বসেন সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালে সালমান শাহর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর আজিজ মোহাম্মদকে থাপড় মারার ঘটনাকে হত্যাকান্ডের মোটিভ হিসেবে ধরেন অনেকেই। অবশ্য সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন আজিজ। সালমান হত্যাকান্ড নিয়ে দুবার জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও পড়েন তিনি। কিন্তু কোনো রকম প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
তবে সোহেল চৌধুরীর চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় এবার আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ জনের জামিন বাতিল করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার একটি ট্রাইব্যুনাল। অপর ২ আসামি হলেন- ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম এবং ব্যবসায়ী সেলিম খান।ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. জাকির হোসেন আজ রোববার আদালতে আসামির অনুপস্থিতিতে এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৪ মার্চ দিন ধার্য করেন।
আদালতের আদেশ পালনে ব্যর্থ হওয়ায় মামলার বাদী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধেও জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আফরিন শিল্পী বলেন, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে তিনি জানেন তা আদালতে বর্ণনা দিতে তলব করা হয়েছিল।
এই মামলার ৯ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে থাকা তারিক সাঈদ মামুনকে আদালতে হাজির করা হলেও হারুনুর রশিদ ওরফে লেদার লিটনকে হাজির করা হয়নি। আরও ২ আসামি আদনান সিদ্দিকী ও ফারুক আব্বাসি বর্তমানে জামিনে আছেন এবং তারা আজ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, অন্য ২ আসামি সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশীষ রায় চৌধুরী পলাতক আছেন। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বরে রোডের আবেদীন টাওয়ারের ট্রাম্পস ক্লাবে কয়েকজন দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন অভিনেতা সোহেল চৌধুরী। এ ঘটনার পর নিহতের ভাই বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে গোয়েন্দারা তদন্তের পর ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই আজিজ, বান্টি ও আরও ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ২ বছর পর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়। ওই মামলায় এক আসামির আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৩ সালে উচ্চ আদালত এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। পরে ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯ বছর পর বিচার কার্যক্রমের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।