প্রবাহবার্তা, নড়াইল লোহাগড়া থেকে আহমেদ সাব্বির রোমিও:
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে আজ রোববার (২৬ ডিসেম্বর)।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫৮ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪১১ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৪৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ১১৬ কেন্দ্রে ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৬৯৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রেয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৫ হাজার ৯০৯ জন ও মহিলা ৮৫ হাজার ৭৮৮ জন।
একাধিক ইউনিয়নের ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ভোটের দিন শান্তিপূর্ণভাবে নিজের ভোট পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারব তো ? তাদের মধ্যে এমন শঙ্কা কাজ করছে।শেষ সময়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা ও আতংক কাজ করছে বলে জানাগেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন ইউনিয়নে সহিংসতার ঘটনা ঘটায় আতংক আরও বেড়ে গেছে ভোটাররা জানিয়েছেন।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে তারা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ ভোট আশা করছেন তারা। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য সকল প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানাগেছে।
এদিকে দিঘলিয়া ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. তরিকুল ওসমান বলেন, দিঘলিয়া কলেজ ও স্কুল কেন্দ্রে গতবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। এবারও সেই আশঙ্কা আছে। সেখানকার ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
প্রার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘ভোট টেবিলেই হবে, তবে গোপন কক্ষে। যদি কেউ মনে করেন, ভোট কেড়ে নিয়ে বিজয়ী হবেন, তাহলে সেই চিন্তা বাদ দেন। এ স্বপ্ন দেখবেন না। ভোটারদের আস্থা অর্জন করেন।’
ভোটাররা যেন নিরাপদে ভোট দিতেন পারেন, সে রকম পরিবেশ তৈরি করা হবে বলে পুলিশ সুপার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৭ আনসার সদস্য ও ৫ পুলিশ সদস্য থাকবেন। এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে পুলিশের একাধিক ভ্রাম্যমাণ দল ও গোয়েন্দা পুলিশের টহল থাকবে। র্যাব, বিজিবি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় থাকবেন।
একনজরে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ভোটের লড়াইয়ের চালচিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো।
ইতনা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী শেখ সিহানুক রহমান (নৌকা), স্বতন্ত প্রার্থী মাহফুজা হক (চশমা) ও তানভীর রহমার (আনারস) প্রতিকের মধ্যে ত্রিমুখি ভোট হবে বলে জানাগেছে। এছাড়া ভোটে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে কাজী মামুন (ঘোড়া), শেখ মনিরুজ্জামান (মোটরসাইকেল), সূর্য মোল্যা (টেলিফোন), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আকিনুর রহমান (হাতপাখা)প্রতীকে।
নোয়াগ্রাম ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মুন্সি জোসেফ হোসেন (নৌকা) প্রতিক নিয়ে লড়ছেন। এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাহিদুল ইসলাম কালু (আনারস) ও কবিরুল হক লাবু নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর কারনে নৌকার জয় নিশ্চিত এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকী মাত্র। এখানে ভোটে লড়ছেন, মো. আরমান মিয়া (মোটরসাইকেল), মো. ওসি সরদার (চশমা) প্রতীকে।
জয়পুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম সুমন (নৌকা প্রতিকে লড়ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আখতার হোসেন (আনারস) প্রতিক নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোয় নৌকার জয় নিশ্চিত এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকী মাত্র।
এছাড়া ভোটে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. লিয়াকত হোসেন (মোটরসাইকেল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মো. জুয়েল ফকির (হাতপাখা) প্রতীকে।
নলদী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ পাখি (আনারস), আসাদুজ্জামান মোল্যা স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঘোড়া) মধ্যে ত্রিমুখি নির্বাচন হবে। সে ক্ষেত্রে নৌকা এবং আনার প্রতিকের ভোটের টানটানির মধ্যে ঘোড়া এগিয়ে যেতে পারে বলে স্থানীয়রা জানায়। এখানে ভোটে আরও লড়ছেন মো. অলিয়ার রহমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা), দিদারুল ইসলাম (সিংহ) প্রতীকে।
লাহুড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী এস এম আনিছুর রহমান (নৌকা), মো. দাউদ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস)প্রতীক, এস এম কামরুল (কামরান) স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঘোড়া) প্রতিকে নির্বাচন করছেন। তবে এখানে ভোট হবে দ্বিমুখি দাউদ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) ও এস এম কামরুল (কামরান) স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঘোড়া) প্রতিকের মধ্যে বলে জানাগেছে।
শালনগর ইউনিয়নে মো.লাবু মিয়া পেয়েছেন (নৌকা), মোস্তাফিজুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঘোড়া) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কাশেম (মোটরসাইকেল) মধ্যে এখানে ভোট হবে ত্রিমুখি। এছাড়া ভোটে লড়ছেন ফারুক হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস), আলী আহমেদ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা)প্রতীকে।
লক্ষীপাশা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী কাজী বনি আমিন (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর মোহাম্মদ (আনারস), ফজলুল হক (ঘোড়া), প্রতিকের মধ্যে ত্রিমুখি ভোট হবে বলে জানাগেছে। এছাড়া ভোটে লড়ছেন সাইফুজ্জামান জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মো. হাফিজুর রহমান (হাতপাখা) প্রতীকে।
লোহাগড়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মোছা. নাসমিন বেগম (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম (আনারস) প্রতিকের মধ্যে দ্বিমুখি ভোট হবে। তবে চেয়ারম্যান যেই হোক অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবে বলে ভোটারদের ধারনা। এছাড়া ভোটে লড়ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মো. মিঠুন গাজী (হাতপাখা)প্রতীকে।
দিঘলিয়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী নীনা ইয়াসমিন (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ বোরহান উদ্দিন (আনারস) ও মো. কামরুল ইসলাম (মোটরসাইকেল) প্রতিকের মধ্যে ত্রিমুখী ভোট হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া ভোটে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. তরিকুল ইসলাম (চশমা), সৈয়দ জাহিদুল ইসলাম (অটোরিক্স), সৈয়দ মিরাজুল ইসলাম (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আরিফুল ইসলাম (হাতপাখা) প্রতীকে।
মল্লিকপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মুন্সি শরিফুল ইসলাম (নৌকা) স্বতন্ত্র গোলাম মোস্তফা কামাল (টেলিফোন) ও মো. সহিদুর রহমান শহিদ (মোটরসাইকেল) প্রতিকের মধ্য ত্রিমুখি ভোট হবে বলে স্থানীয়রা জানায়। এছাড়া ভোটে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আকবর হোসেন (চশমা), এস এম ফরিদুজ্জামান (আনারস), সৈয়দ নুরুল আলম (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শরীফ আল হেলাল (হাতপাখা)প্রতীকে।
শালনগর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান (ঘোড়া) প্রতিকে লড়ছেন।
কোটাকোল ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হাচান আল মাসুদ (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সেলিমুজ্জামান (আনারস) প্রতিকের মধ্যে দ্বিমুখি ভোট হবে। এছাড়া ভোটে লড়ছেন স্বতন্ত্র বি এম সাহিদুল হাচান (মোটরসাইকেল), মুহম্মদ সাদেকুর রহমান জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) প্রতীকে।
কাশিপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মো. মতিয়ার রহমান (নৌকা), মো. আজিজুর রহমান আরজু স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) প্রতিকের মধ্যে দ্বিমুখি ভোট হবে। এছাড়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মো. মাসুদুর রহমান(হাতপাখা) প্রতীকে ভোটে লড়ছেন।
এদিকে, লোহাগড়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ জসিম উদ্দিন গত ২২ ডিসেম্বর গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আমাদের কাছে বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহনের লক্ষে আমরা জেলা প্রশাসন, উপজেলা জেলা প্রশাসন ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী যৌথভাবে কাজ করছি। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হবে।
লোহাগড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু হেনা মিলন গত ২২ ডিসেম্বর গণমাধ্যম কে বলেছিলেন, কয়েকটি ইউনিয়নে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে বিষয়টি জানার পরই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার ও ২জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্বক্ষনিক বিষয়টি পর্যবেক্ষন করছেন এবং নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। থানার পুলিশের সাথে ডিবি পুলিশও কাজ করছে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহনের জন্য আমরা কাজ করছি।