দৈনিক প্রবাহবার্তা প্রতিবেদন : প্রবাসী কর্মীর মেধাবী সন্তানদের লেখাপড়ায় উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে ২০১২ সালে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড শিক্ষাবৃত্তি প্রবর্তন করে। বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতক শেষ বর্ষ পর্যন্ত (এসএসসি ও এইচএসসি অথবা সমমান) কর্মীর মেধাবী সন্তানদের বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। ২০১২ খেকে ২০২৩ পর্যন্ত ২৬৬৯০জন প্রবাসী কর্মীর মেধাবী সন্তানকে ৪৮কোটি ১৯ লক্ষ টাকা প্রদান করে। সেই ধারাবাহিকতায় গত ২২-০১-২০২৪ তারিখ ২৪ জন মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের চেক প্রদান করা হয়। এবিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সকল কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন সহকারী পরিচালক মোঃ শওকত হোসেন,তিনি বলেন
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রবাসীদের পরিবারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সুৃঢ়করণের লক্ষ্যে তাদের প্রতিবন্ধী সন্তানদের উন্নয়নে ও সহায়তায় ভাতা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যা প্রবাসীদের পরিবারের অর্থবহ ও টেকসই কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ৫ বছর মেয়াদ মাসিক ১,০০০/- (এক হাজার) টাকা করে বছরে ০১ বার ১২,০০০/- টাকা অভিভাবকের অনুকুলে চেকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। একজন প্রবাসী কর্মীর সর্বোচ্চ ২ (দুই) জন সন্তান প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্য হয়ে থাকেন। সরকার প্রবাসী কর্মীর প্রতিবন্ধী সন্তানদের জন্য ২০২১ সাল থেকে “প্রতিবন্ধী ভাতা” প্রবর্তন করেছে।২০১২ খেকে ২০২৩পর্যন্ত ১৫৫২জন প্রবাসী কর্মীর প্রতিবন্ধী সন্তানকে ১ কোটি ৯১ লক্ষ ৪ হাজার টাকা প্রদান করে। সেই ধারাবাহিকতায় গত ২৩-০১-২০২৪ তারিখে সিলেট ওয়েলফেয়ার সেন্টার থেকে ২৪ জন প্রবাসী কর্মীর প্রতিবন্ধী সন্তানদের চেক পদান করে। সিলেট ওফেয়ার সেন্টার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের জেলা অফিস। যেখান থেকে বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত ০১ কোটির অধিক বাংলাদেশি কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সার্বিক কল্যাণ সাধনে ১৯৯০ সালে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল গঠিত হয়। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল বিধিমালা, ২০০২ অনুযায়ী একটি পরিচালনা বোর্ডের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালিত হতো।পরবর্তীতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড আইন, ২০১৮ পাসের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ বোর্ড গঠন করা হয়। আইন অনুসারে ১৬ সদস্যর একটি পরিচালনা পরিষদ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিচালনা পরিষদের (বোর্ড) সভাপতি। সদস্য হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি), বাংলাদেশ ওভারসিজ এম্পুয়মেন্ট এন্ড সার্ভিসেস লিঃ (বোয়েসেল), বাংলাদেশ ব্যাংক, বিদেশ প্রত্যাগত ১ জন নারীসহ ৩ জন কর্মী এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) এর প্রতিনিধি রয়েছে।
“মৃতদের দেশে আনয়ন/সংশ্লিষ্ট দেশে দাফন”
প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী কর্মীর মৃত দেহ পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে দেশে আনা হয়। কোন কর্মীর পরিবার মৃতদেহ সংশ্লিষ্ট দেশে দাফনের আগ্রহ প্রকাশ করলে পরিবারের লিখিত মতামত সাপেক্ষে বাংলাদেশ মিশনসমূহের সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট দেশে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী কর্মীর মৃতদেহ সাধারণত নিয়োগকর্তার খরচে দেশে আনা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা পাওয়া গেলে বা নিয়োগকর্তা অপারগতা প্রকাশ করলে অথবা বাংলাশে কমিউনিটির সহায়তা পাওয়া না গেলে মৃতদেহ কল্যাণ বোর্ডের অর্থে দেশে আনা হয়। এজন্য প্রতি অর্থ বছর বাংলাদেশ মিশনসমূহের শ্রম কল্যাণ উইংয়ে “মৃতদেহ দেশে প্রেরণ”বাবদ খাতে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়।
“মৃতদেহ পরিবহন ও দাফন বাবত সহায়তা”
প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী কর্মীর মৃতহে দেশে পৌঁছালে বিমানবন্দরস্থ প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে মৃতের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। মৃতদেহ হস্তান্তরের সময় প্রত্যেক মৃত কর্মীর পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদেহ পরিবহন ও দাফন খরচ বাব ৩৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। ১৯৯৩ হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫১৯৫৬ জনের মৃতহে পরিবহন ও দাফন বাবত পরিবারকে ১৬৬৬.৯৫ মিলিয়ন টাকা সহায়তা করা হয়েছে।
“আর্থিক অনুদান”
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র (ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স) নিয়ে বিদেশ গমনকারী বা বিদেশে বৈধভাবে কর্মরত অথবা অনাবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি) হিসেবে বাংলাদেশ মিশনসমূহের মাধ্যমে কল্যাণ বোর্ডের ডাটাবেইজে অন্তর্ভুক্ত কর্মী প্রবাসে মৃত্যুবরণ করলে তাঁদের পরিবারকে বোর্ড থেকে এককালীন ৩ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। এছাড়া কোন কর্মী ছুটিতে কিংবা অসুস্থ হয়ে দেশে ফেরত আসার ৬ মাসের মধ্যে মৃত্যুবরণ করলে তাঁরে পরিবারকেও সমপরিমান অর্থ অনুদান দেয়া হয়। ১৯৯৬ হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫২৩৩৯ জনের আর্থিক অনুদান বাবত পরিবারকে ১৪৩০৫ মিলিয়ন টাকা সহায়তা করা হয়েছে।
“ মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ/বকেয়া বেতন/সার্ভিস বেনিফিট/ইন্স্যুরেন্সের আদায়কৃত অর্থ বিতরণ”
বিদেশে মৃত্যুবরণকারী কর্মীর মৃত্যুজনিত কারণে নিয়োগকর্তা অথবা অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হতে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ/বকেয়া বেতন/সার্ভিস বেনিফিট/ইন্স্যুরেন্সের অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাশে মিশনসমূহের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের মাধ্যমে আদায়ের ব্যবস্থা করে থাকে। আদায়কৃত অর্থ তাঁদের ওয়ারিশদের মধ্যে যথাযথভাবে বিতরণ করা হয়। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ২৯টি দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের সহযোগিতায় এর কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ১৯৭৭ হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৩৬৫০ জনের মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ/বকেয়া বেতন/সার্ভিস বেনিফিট/ইন্স্যুরেন্স বাবত পরিবারকে ৯৩০১.৯৫ মিলিয়ন টাকা সহায়তা করা হয়েছে।
“চিকিৎসার্ আর্থিক সহায়তা”
প্রবাসে কর্মরত অনেক কর্মী নানা ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গুরুতর আহত অথবা অন্য কোন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেশে আসার পর এ সকল কর্মীর চিকিৎসার্ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড হতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্কি সহায়তা প্রদান করা হয়।
“অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা প্রদান”
বিদেশে ফেরত অসুস্থ এবং প্রবাসে মৃত কর্মীর মরদেহ পরিবহনের জন্য বিমানবন্দর হতে সাশ্রয়ী মূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকায় ২ টি এবং শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামে ১ টি অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া অসুস্থ কর্মীর সাথে আগত সহযোগীচিকিৎসক ও নার্সকে মানসম্মত হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হয়।
“বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে সহায়তা”
নিরাপদ বিদেশ গমন এবং প্রত্যাবর্তনকালে বিমানবন্দরস্থ “প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক” এর মাধ্যমে কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়। বর্তমানে দেশের ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর- হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট এবং শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম-এ স্থাপিত প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে কর্মীদের সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে কাজ হারিয়ে বিপুল সংখ্যক কর্মী দেশে ফেরত এসেছে। এসব কর্মীদেরকে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক হতে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করেছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয় এবং সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ সময়ে বিদেশ ফেরত কর্মীদের বিমানবন্দর হতে বাড়ীতে পৌছানো ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বাবত ৫৯৭৪ জনকে ২.৯৭ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। সৌদি আরব সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা টিকা গ্রহণ ছাড়া ২০ মে, ২০২১ থেকে সেদেশে গমনকারী বাংলাদেশি কর্মীদের হোটেল কোয়ারেন্টিন থাকা বাধ্যতামূলক করা হয় যা অনেকের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। এপ্রেক্ষিতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড হতে সৌদি আরবগামী কর্মীরে কোয়ারেন্টিন খরচ বাবত (জুন-২০২৩ পর্যন্ত) জন প্রতি ২৫ হাজার টাকা করে ৪৪,৩৯১ জনকে ১১০,৯৭,৭৫,০০০/- (একশত দশ কোটি সাতানব্বই লক্ষ পঁচাত্তর হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
“রিইন্টিগ্রেশন প্রকল্প”
বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে বিভিন্ন দেশ হতে কাজ হারিয়ে ২০২০ সালে প্রায় ৫ লক্ষ কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। প্রত্যাগত অধিকাংশ কর্মী কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন এবং পরিবার পরিজন নিয়ে অর্থকষ্টসহ সমাজে নানা ধরণের প্রতিকুল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাঁরে পুন:একত্রীকরণের (রি-ইন্টিগ্রেশন) লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে “Recovery
and Advancement of Informal Sector Employment (RAISE):
Reintegration of Returning Migrants” শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রত্যাগত কর্মীদের পুন:একত্রীকরণ এবং পুনর্বাসন তথা আত্মকর্মসংস্থানে সহযোগিতা করা হবে: নগদ প্রণোদনা; আত্মকর্মস্থানে সহযোগিতা; ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতা; কাউন্সিলিং; উদ্যেক্তা প্রশিক্ষণ গ্রহণে সহযোগিতা; দক্ষতা সনদ প্রদান; কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণে সহযোগিতা; কল্যাণ মূলক অন্যান্য সহযোগিতা করা হবে। উল্লেখ্য, গত ২৮ জুলাই, ২০২১ তারিখে প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন প্রদান করেন। গত ৩০ জুলাই ২০২৩ তারিখে ৩০টি জেলায় শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডেও ওয়েলফেয়ার সেন্টারে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
“বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার”
বিশেদগামী ও প্রবাস ফেরত কর্মীদের বিদেশ গমন ও আগমনের নিদিষ্ট দিনের আগে/পরে ঢাকায় অবস্থানের জন্য পূর্বে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় থাকতেন। এতে করে দুর-দুরান্ত থেকে আসা কর্মীরে ভোগান্তিতে পরতে হতো। এই সমস্যা দূরীকরণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিদেশগামী ও প্রবাস ফেরত কর্মীদের জন্য ঢাকাস্থ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটে শতভাগ নিরাপদ ও মনোরম পরিবেশে “বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার” (ইডঊঈ) স্থাপন করা হয়েছে। প্রবাসী কর্মীগণ ন্যূনতম খরচে বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে অথবা বিদেশ হতে দেশে ফেরার সময়ে এ সেন্টারে সাময়িকভাবে অবস্থান করতে পারবেন। সেন্টারের নিজস্ব পরিবহনে বিমানবন্দরে যাতায়াতসহ সাশ্রয়ী মূল্যে খাবারের সুব্যবস্থা আছে। এছাড়াও প্রবাসী কর্মীদের রিইন্টিগ্রেশন (পুনঃএকত্রীকরণ) এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বা করণীয় সম্পর্কে এখানে ব্রিফিং প্রদান করা হয়। এ সেন্টারটি ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের একটি যুগান্তকারী স্থাপনা। সেন্টারটি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সুনাম অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারটি সর্বোপরি প্রবাসী কর্মীদেও একত্রিত হওয়ার এবং পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান হবে যা দেশে এই প্রথম।
“শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে সহায়তা”
দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবাসী কর্মীর সন্তান কোটায় কর্মীর সন্তানদের ভর্তির জন্য বোর্ড হতে প্রত্যয়ন পত্র ইস্যু করা হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১৬ সাল হতে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ভর্তিতে আসন সংরক্ষিত করা হয়। এছাড়া স্নাতক শ্রেণির ভর্তিতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বব্যিালয় কর্তৃপক্ষ প্রবাসী কর্মীর সন্তানদের জন্য আসন সংরক্ষিত রয়েছে। অন্যান্য শ্রেণির ভর্তিতেও আসন সংরক্ষণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
“বীমা সুবিধা প্রদান”
বিশেদগামী সকল কর্মীকে বীমা সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। জীবনবীমা কর্পোরেশনের মাধ্যমে এ সুবিধা প্রদান করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী কর্মীর প্রিমিয়াম ৯৯০/- টাকা এর মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য হতেন। পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণের অর্থ ২ লক্ষ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ ৪ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে বিদেশগামী কর্মীদের বাধ্যতামূলক বীমার আওতায় আনয়নে এককালীন ১ হাজার টাকা প্রিমিয়াম ৫ বছর মেয়াদে ১০ লক্ষ টাকায় “প্রবাসী কর্মী বীমা” চালু করা হয়েছে। এছাড়াও প্রত্যাগত, চাকরিচ্যুত, আহত ও অসুস্থ কর্মীগণ ৬ মাসের মধ্যে ফেরত আসলে ৫০ হাজার টাকা বীমা সুবিধা প্রদান করা হয়।
“অনিবন্ধিত ও অনাবাসী প্রবাসী বাংলাদেশিদের বোর্ডের ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্তি”
বিদেশে বসবাসরত অনিবন্ধিত ও অনাবাসী প্রবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) বোর্ডের সেবার আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মিশনসমূহের মাধ্যমে তাঁদেরকে ডাটাবেইজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বহির্গমন ছাড়পত্র ব্যতীত বিদেশ গমণকৃত বাংলাদেশি অভিবাসীকর্মী এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি অভিবাসী জনগোষ্ঠী বাংলাদেশ মিশনসমূহের মাধ্যমে কল্যাণ বোর্ডের মেম্বারশীপ গ্রহণকারী কর্মী ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন। এ যাবৎ বিদেশে বসবাসরত অনাবাসী ও অনিবন্ধিত বাংলাদেশী ১,৭৬,৮৯৫ জন কর্মীকে মেম্বারশীপ প্রদান করা হয়েছে।
“প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার”
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল দপ্তর সংস্থা প্রবাসী কর্মী ও তাঁদের পরিবারের কল্যাণে সার্বিকভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রদেয় সেবাসমূহ সেবা প্রার্থীদের দোঁরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য কল্যাণ বোর্ড নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। উক্ত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার চালু করা হয়েছে। কল সেন্টারের মাধ্যমে এ কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে এবং সেবা গ্রহীতাদের কাছে সহজলভ্য করার প্রয়াসে ৫ ডিজিটের টোল ফ্রি নম্বর প্রবর্তন করা হয়েছে। কলসেন্টারের ব্যবহৃত নম্বর (টোল ফ্রি ১৬১৩৫, বিদেশ থেকে +৮৮০৯৬১০১০২০৩০) এর মাধ্যমে দেশে এবং বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী কর্মী ও তাঁদের পরিবার খুব সহজেই মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর সংস্থা কর্তৃক প্রদেয় সার্বিক সেবা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করতে পারেন।