প্রবাহবার্তা স্পোর্টস প্রতিবেদন : সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অষ্টম আসরের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মালিকানাধীন ফ্র্যাঞ্চাইজি ঢাকা দলে নিয়েছে দেশের দুই সেরা তারকা তামিম ইকবাল এবং মাশরাফি বিন মর্তুজাকে।
রুপা ফেব্রিকস লিমিটেড এবং মারন স্টিল লিমিটেড (কনসোর্টিয়াম) ঢাকা বিভাগের মালিকানা পেলেও বিসিবির শর্ত পুরনে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ মুর্হূতে তাদের বাদ পড়তে হয়।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সেক্রেটারি আইএইচ মল্লিক জানান, ঢাকা আপাতত বিসিবি দ্বারা পরিচালিত হবে এবং পরে তারা সিদ্ধান্ত নিবে, তারা দলের স্পন্সর বা মালিকানা নিবে কি-না।
মালিকানা ইস্যুটি যখন শেষ মুর্হূতের নাটকীয়তায় পরিণত হয়েছিল, তখন বড় আশ্চর্যজনক বিষয়টি ছিল দেশের দুই সেরা তারকা, তামিম ইকবাল এবং মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে প্লেয়ার ড্রাফটের আগে সরাসরি কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজিই চুক্তি করেনি।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে, প্রতিটি দল সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে একজন স্থানীয় খেলোয়াড় এবং তিনজন বিদেশী খেলোয়াড়কে দলে নিতে পেরেছিলো। ঢাকা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ দলে নিয়েছে এবং সাকিব আল হাসানকে বরিশাল এবং মুশফিকুর রহিমকে চুক্তিবদ্ধ করে খুলনা।
কুমিল্লা মুস্তাফিজুর রহমানকে ও চট্টগ্রামের হয়ে চুক্তি করেন নাসুম আহমেদ। সিলেট নিশ্চিত করে তাসকিন আহমেদকে।
আজ শহরের একটি স্থানীয় হোটেলে প্লেয়ার ড্রাফটে বড় আলোচনার বিষয় ছিল অভিজ্ঞ জুটি তামিম-মাশরাফি কোন দল পাবে কি-না।
প্রথম খেলোয়াড় ডাকার লটারি জিতে নেয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলে নেয়নি তামিমকে। তবে প্রথম ডাকার রাউন্ডে তামিমকে দলে নেয় ঢাকা। কুমিল্লা দলে নেয় লিটন দাসকে। এটি কিছুক্ষণের জন্য উত্তেজনা তৈরি করেছিল, কিন্তু ঢাকা যে দ্বিতীয় কলটি পেয়েছিলো, তাতে তামিমকে দলে নিয়ে নেয় তারা। সিলেট সানরাইজার্স ছিলো তৃতীয়তে। এতে তারা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে বেছে নেয়। খুলনা টাইগার্স বেছে নিয়েছে মাহেদী হাসানকে এবং শেষ দল হিসেবে প্রথম রাউন্ডে পেসার শরিফুল ইসলামকে দলে নেয় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
ভিন্ন দুই দলের হয়ে বিপিএলে অধিনায়ক হিসেবে চারটি শিরোপা জিতেছেন মাশরাফি। তারপরও ড্রাফটের দ্বিতীয় রাউন্ডে তাকে কোন দলই নেয়নি। তবে তৃতীয় রাউন্ডে দল পান সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি। ম্যাশকে দলে নেয় ঢাকা।
সেরা তিন খেলোয়াড়কে দলে নিয়ে একটি শক্তিশালী দল গঠন করেছে ঢাকা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই তিনজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের মধ্যে দু’জন ইতোমধ্যে ৩৫ পেরিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের গতির সাথে তারা মানিয়ে নিতে পারবেন কি-না, সেটিই দেখার বিষয়।
এর আগে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সে একত্রে খেলেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল-মাশরাফি ও সাকিব।
সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু বিপিএলে, জেসকন খুলনার হয়ে খেলেছিলেন মাহমুদুল্লাহ-মাশরাফি ও সাকিব।
এক দলে মাশরাফি ও মাহমুদুল্লাহ মতো সতীর্থদের পেয়ে রোমাঞ্চিত তামিম। ড্রাফট শেষে বাঁ-হাতি ওপেনার তামিম বলেন, ‘এটা আশা করা যায় না। এবার সৌভাগ্যবশত তাই হয়েছে এবং আমরা সবাই খুব খুশি। আমি মনে করি না, ক্রিকেটে সবকিছুতেই জয়-পরাজয় খুব বেশি। ক্রিকেট উপভোগ করা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তিনজন একসাথে থাকাটা উপভোগ করবো।’
তামিমের সুরে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমি সবসময় বিশ্বাস করতাম আমরা আবার একসাথে খেলতে পারবো। তামিমও আমাদের সাথে আছে। মাশরাফি ভাইয়ের সাথে বা অধীনে খেলা আমরা সবসময় উপভোগ করি। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের সময় আমাদের খুব ভালো সময় ছিলো এবং আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পেরেছিলাম। আমি আশা করি, আমরা এই দলে এমন ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারবো এবং ভালো ক্রিকেট খেলতে পারবো।’
ঢাকা অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানাধীন ছিল। কিন্তু পূর্বের মালিকরা তাদের আর্থিক প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারায় বিসিবি নিজ দায়িত্বে¡ দল গঠন করে। দল গঠনের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক ক্রিকেটার ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার এবং তার সাথে আরও ছিলেন শাহরিয়ার নাফিস।
তামিম অবশ্য ঢাকা দলকে নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘দল খুব ভালো হয়েছে। আমরা চ্যাম্পিয়ন হব কি-না জানি না, তবে আমরা অবশ্যই লড়াই করবো। আপনি সেরা দল তৈরি করতে পারেন, কিন্তু তারা যে ভালো করবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। খুব ভালো দল, ভালো নাও করতে পারে। এটা নির্ভও করবে আমরা কিভাবে খেলবো, তার উপর। আমি দল নিয়ে খুব খুশি, কিন্তু আমাদের ভালো খেলতে হবে।’