প্রবাহবার্তা প্রতিবেদন :ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের মূলোৎপাটনের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা-মন্ত্রীরা বলেছেন, দেশকে নেতৃত্বশূন্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড আর জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে জিয়াউর রহমান। সেই ষড়যন্ত্রকারীদের কুশীলব ও সবক্ষেত্রে ব্যর্থ বিএনপিসহ সাম্প্রদায়িক অপশক্তিরা এখনও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ ও মূলোৎপাটন করতে না পারলে এরা ষড়যন্ত্র করেই যাবে।
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বুধবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে সা¤প্রদায়িক রাজনীতি পুনর্বাসিত করেছিলেন। বিএনপি মুক্তিযোদ্ধার দল নয়, মুখোশধারী মুক্তিযোদ্ধার দল। এটা গণতান্ত্রিক দল নয়, বর্ণচোরা গণতান্ত্রিক দল। সা¤প্রদায়িক শক্তির বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হচ্ছে বিএনপি। এখন দেশের এক নম্বর শত্রæ হচ্ছে সা¤প্রদায়িকতা। আর এই সা¤প্রদায়িকতার চারা জিয়াউর রহমানই রোপণ করেছিল। সেই বিষবৃক্ষ এখন ডালপালা ছড়াচ্ছে।
আমাদেরকে অভিভাবকশূন্য করতে বঙ্গবন্ধুকে আর নেতৃত্বশূন্য করতে জাতীয় চার নেতাকে জেলখানার ভেতরে হত্যা করা হয়েছিল জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বিএনপির প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, কারা এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল? আপনারা (বিএনপি) এই দায় এড়াতে চান, সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে। খুনীদের রক্ষা করতে কে তাদের বিদেশে পাঠিয়েছিল, পুরস্কৃত করেছিল। খুনীদের পুরস্কৃত, পুনর্বাসন করেছিল সেনাপতি জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না এই অধ্যাদেশের বৈধতাও দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড আর জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের মাস্টারমাইন্ড জিয়াউর রহমান দাবি করে তিনি বলেন, খুনীদের মতোই একই অপরাধে তিনি অপরাধী। তিনি যদি হত্যাকারী নাই-ই হবেন তাহলে এই হত্যার বিচার হবে না-এই আইনকে কেন বৈধতা দিলেন?
বিএনপির নির্বাচন বর্জনের হুমকি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সেটা তাদের ব্যাপার। সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। সময় ও ¯্রােত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। নির্বাচনও কারও জন্য অপেক্ষা করবে না। বিএনপি নির্বাচনে এলো কি এলো না, তা দেখার বিষয় নয়। আর আপনাদের সংলাপে কে ডেকেছে? শেখ হাসিনা গতবার সংলাপ ডেকেছিল সেটার আপনারা কি জবাবটা দিয়েছেন? সেই সংলাপের পর আপনাদের ভূমিকা কি ছিল? আপনাদেরকে কেউ সংলাপে ডাকছে না। নিজেরাই আগ বাড়িয়ে সংলাপের কথা বলছেন।
সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমাদের জাতীয় চার নেতা জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন, তাঁরা মৃত্যুকে ভয় করেন না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে তাঁরা পালিয়ে যাননি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুকে বুকে ধারণ করে তাঁরাও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জাতীয় চার নেতার নামও আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করব। ত্যাগের আদর্শ ও ত্যাগের কথা সব সময় আমাদের স্মরণ করতে হবে।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৫ আগস্টের মতো ৩ নবেম্বরও বাঙালী জাতির জীবনের একটি কলঙ্কজনক দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য তাদের হত্যা করা হয়। তাদের লক্ষ্য ছিল- বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানী রাষ্ট্র বানাবে। এই ষড়যন্ত্রের একটি অংশ হলো ৩ নবেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে নির্মম, নিষ্ঠুর, বর্বরভাবে হত্যা করা।
জেল হত্যার ঘটনার স্মৃতিচারণ করে ওই সময় একই কারাগারে বন্দী থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, বছরঘুরে যখনই এই রাত আসে, আমার কাছে এটাকে কিয়ামতের রাত মনে হয়। তবে আরেকটা দিক যখন ভাবি তখন নিজে গর্ববোধ করি- এই জাতীয় চার বীর, আপোসহীন নেতা, বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা তাঁদের সঙ্গে দীর্ঘ আড়াই মাস জেলে ছিলাম। আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসা, বিশ্বাস দেখেছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাঁদের যে মনোবল সেটা আমি স্বচক্ষে দেখেছি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, এই বিএনপি-জামায়াত কখনও চায় না বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। এজন্য তারা সব সময় চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করে গেছে। এখনও তারা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মদদ দিয়ে দেশকে অশান্ত করার অপচেষ্টা করছে।
অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে হত্যা করতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। আর ৩ নবেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল আমাদের শেষ পেরেক মারার অশুভ লক্ষ্যকে সামনে রেখে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে তার আদর্শ নিয়ে যেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ঘুরে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিয়েছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সঙ্গে আপোস করেননি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে এখনও আমাদের বড় শত্রæ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। এটা মরণ ব্যাধি। এটা আমাদের অস্তিত্ব ও জাতিসত্ত¡াকে, আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে দ্বিধাবিভক্ত করার যড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু আমাদের হƒদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে দিয়েছে। আমাদের আবারও ঘুরে দাঁড়াতে হবে।