প্রবাহবার্তা, ইতালি প্রতিনিধি: রোম-ভিত্তিক বিশ্ব খাদ্য সংস্থা’র (World Food Programme, WFP) নির্বাহী পরিচালক জনাব ডেভিড বিস্লী (Mr. David Beasley) বাংলাদেশের সাথে তাঁর আন্তরিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বিগত দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর অসামান্য সাফল্যের প্রশংসা করেন। ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ডব্লিউএফপি-তে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি শামীম আহসান, ডব্লিউএফপি প্রধানের কাছে পরিচয়পত্র প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। কোভিড-১৯ সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অত্যন্ত উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ৮ জুন ২০২১ ডব্লিউ এফপি’র সদর দপ্তরে এ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
রাষ্ট্রদূত আহসান ডব্লিউএফপি’র স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে তাকে আনু্ষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করার জন্য এবং বাংলাদেশের অর্জন সম্পর্কে তাঁর উচ্চ ধারণার জন্য ডব্লিউএফপি’র নির্বাহী পরিচালককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি ২০২০ সালে, ডব্লিউএফপি’র নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তি এবং কোভিড-১৯ সৃষ্ট পরিস্থিতির মধ্যেও ২০২০ সালে রেকর্ড পরিমান আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করায় ডব্লিউএফপি’র নির্বাহী পরিচালকের গতিশীল নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশে ডব্লিউএফপি’র কার্যক্রমকে বহুমাত্রিক, দীর্ঘস্থায়ী ও অত্যন্ত কার্যকরী উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি ‘স্কুল ফিডিং কর্মসূচি’ এবং ‘ফর্টিফাইড রাইস’ সরবরাহ কার্যক্রমে সরকারের আর্থিক অনুদান ও প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার বিষয়ে নির্বাহী পরিচালককে অবহিত করেন। তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতেও ডব্লিউএফপি’র অভূতপূর্ব সহায়তা ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন। এবং এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা জনগণের তাদের নিজ ভূমিতে নিশ্চিত, নিরাপদ এবং সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে ডব্লিউএফপি’র নির্বাহী বোর্ডের মাধ্যমে মায়ানমার সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের জন্য নির্বাহী পরিচালককে অনুরোধ করেন।
ডব্লিউএফপি’র নির্বাহী পরিচালক এসময় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি স্ব-চক্ষে পর্যবেক্ষণের জন্য বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ ভ্রমণের কথা উল্লেখ করেন এবং নিজেদের অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তার ঝুঁকি উপেক্ষা করে শুধু মানবিক কারণে নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সবধরনের সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্বশীল নীতি ও অসাধারণ দেশ নেতৃত্ব এবং মানবিক মমত্ববোধের উচ্ছসিত প্রশংসা করেন। ডব্লিউএফপি’র প্রধান রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের ওপর যাতে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি না করে সে বিষয়ে সংস্থাটির নির্বাহী বোর্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করার আশ্বাস দেন। রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান ও স্থায়ী প্রতিনিধি এ সময় ডব্লিউএফপি’র নির্বাহী বোর্ডের ২০১৯ সালে সরেজমিনে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং পরবর্তীতে তাদের অভিজ্ঞতা বোর্ড সদস্যদের অবহিত করা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের ইতালি সফরকালে ডব্লিউএফপি’র সদর দপ্তরে তাকে অবহিত করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও বোর্ড সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি বাংলাদেশের জন্য ২০২২-২০২৬ মেয়াদে Country Strategic Plan (CSP) প্রস্তুতির অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন ও CSP বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উন্নয়ন সহযোগিদের কাছ থেকে উন্নয়ন সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সাথে ডব্লিউএফপিকে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করার অনুরোধ করেন।
পরিশেষে বাংলাদেশ এবং ডব্লিউএফপি আগামী দিনগুলোতে ক্ষুধা ও দারিদ্র মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। অনুষ্ঠানে দূতাবাসের ইকনমিক কাউন্সিলর ও রোমভিত্তিক জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের বিকল্প স্থায়ী প্রতিনিধি জনাব মানস মিত্র এবং ডব্লিউএফপি থেকে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।