রীতা রায় মিঠু : ভয় একটি সংক্রামক ব্যাধি। একজন থেকে ভয় অন্যজনে সংক্রমিত হয়, ধীরে ধীরে গোটা সমাজটাই ভীত হয়ে পড়ে।
ছোটবেলা থেকেই আমি অন্ধকার ভয় পাই, একাকীত্ব ভয় পাই, পরীক্ষার হলে যেতে ভয় পাই, মারামারি ভয় পাই, ঝগড়া ভয় পাই, রাস্তা হারিয়ে ফেলার ভয় পাই, কেঁচো বিছা সাপ ভয় পাই, পাছে লোকে কিছু বলে ভয় পাই, খুনখারাবি ভয় পাই, দরিদ্রতা ভয় পাই, ইন্টারভিউ দিতে ভয় পাই, ক্যামেরার সামনে কথা বলতে ভয় পাই, ক্যান্সার ভয় পাই,
সবচে বেশি ভয় পাই ভূত এবং মৃত্যুকে।
আমার ভয়গুলো ছোটবেলায় কেউই ভেঙ্গে দেয়নি, আমার আধুনিক চিন্তার বাবা- মাও না।
ফলে আমি একজন ভীতু হিসেবেই জীবন কাটিয়ে দিলাম। ভয় জমে জমে আমার মনের ভেতর কঠিন শিলায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে।
আমার তিন কন্যা, আমি চাইনি আমার সন্তানেরা আমার মত ভীতু হোক।
ছোটবেলা থেকেই ওদের একা ঘরে পড়তে বসিয়েছি, একা ঘরে শুতে দিয়েছি। ভয় কি, তা বুঝে ওঠার আগেই শিখিয়েছি, ” ভয় পেয়ো না। তোমাদের মা’কে দেখো, ভয়ে ভয়ে জীবন কাটিয়ে জীবনটাকেই একটা গন্ডির ভেতর আটকে ফেলেছে।
তোমরা ভয়কে জয় করো। ভীতরা সামনে এগোতে পারে না। তোমাদের সামনের দিকে যেতে হবে। এক জায়গায় আটকে থাকাও চলবে না, পেছনে আসাও চলবে না।
তোমরা মানুষকে ভয় পাবে না। ভয় নয় ভালোবাসতে শিখো। প্রথমে নিজেকে ভালোবাসবে, এরপর পরিবার বন্ধু স্বজন সকলকে ভালোবাসবে।
ঈশ্বরকেও ভয় পাবে না। ঈশ্বরকে ভক্তি করবে ভালোবাসবে। ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখবে, আপদে বিপদে ঈশ্বরকে স্মরণ করবে, ঈশ্বর পথ দেখাবেন।”
ভীতু চরিত্রের হলেও আমি কিন্তু মানুষ ভয় পাই না, সমাজের চোখ রাঙানি ভয় পাই না, পুরুষের শাসন ভয় পাই না, ছেলেদের সাথে বন্ধুত্বে ভয় পাই না, অতিথি আপ্যায়ন ভয় পাই না, রান্না করতে ভয় পাই না, অতিথি আপ্যায়ন ভয় পাই না, অসুস্থকে সেবা করতে ভয় পাই না, আজকাল করোনাকেও ভয় পাচ্ছি না।
শুধু আজও মৃত্যুকে ভয় পাই, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মৃত্যুকে ভয় পাবো**