ফাহাদের কাছে ‘জিম্মি’ অর্ধডজন কিশোরী
প্রেমের সূত্র ধরে একাধিক নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ হয় বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হোসেন মোহাম্মদ ফাহাদ (২৭)। তাদের বেশির ভাগ কিশোরী। এরপর গোপনে বিশেষ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখত ফাহাদ। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে কানাডায় গিয়ে এখন এসব ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেল করছে। ইতিমধ্যে ফাহাদ তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে অনেক কিশোরীকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেছে। তার কথামতো কাজ না করলে ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যম এমনকি পর্নো সাইটে ছড়িয়েও দেওয়া হয়েছে।
এমনই প্রতারণার শিকার এক কিশোরী ৮ মার্চ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পল্লবী থানায় ফাহাদ ও তার মামা সিফাতের (২২) বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করে। পরে গত সোমবার সিফাতকে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
এ বিষয়ে ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আশরাফউল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিফাত ঢাকার আইইউবিএটির হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম বিভাগে পড়ালেখা করে। সম্পর্কে কানাডাপ্রবাসী ফাহাদের মামা। ফাহাদ ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে ভুক্তভোগী কিশোরীকে সিফাতের সঙ্গে অনৈতিক কাজে বাধ্য করে। ফাহাদ ও সিফাত পরিকল্পনা করেই এ কাজ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘সিফাতের মুঠোফোনে ফাহাদের সঙ্গে আরও অনেক মেয়ের অন্তরঙ্গ ভিডিও পাওয়া গেছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’
ডিবির ভাষ্য, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (ইইই) স্নাতক করে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ায় মাস্টার্স করছে হোসেন মোহাম্মদ ফাহাদ। তার বাবা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। রাজধানীর মিরপুরে ৬ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের একটি বাসায় বসবাস করেন তিনি।
ফাহাদের প্রতারণার শিকার এক কিশোরী দেশ রূপান্তরকে জানায়, ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর পাশের বাসার বড় আপুর মাধ্যমে ফাহাদের সঙ্গে যখন তার পরিচয় হয়, সবেমাত্র জেএসসি দিয়েছে। শুরুতে না চাইলেও একপর্যায়ে ফাহাদের সঙ্গে তার প্রেম হয়। এরই সূত্র ধরে একদিন ফাহাদ তার মামার বাসায় নিয়ে গিয়ে আরও ঘনিষ্ঠ হয় এবং গোপনে সেই বিশেষ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে। সম্পর্কের দেড় বছরের মাথায় ২০১৮ সালের মাঝামাঝি ফাহাদ কানাডায় চলে যায়। এরপর তিন মাস সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। তারপরই ফাহাদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসে। তার কাছে থাকা ছবি ও ভিডিও মেয়েটিকে পাঠিয়ে বলে, তার কথামতো না চললে সবকিছু ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে। একপর্যায়ে সে তার এক মামার (সিফাত) সঙ্গে মিলিত হতে এবং সে মুহূর্তটি ভিডিও কলে দেখাতে চাপ দেয়। এ প্রস্তাবে প্রচন্ড ভেঙে পড়ে, কান্নাকাটি করেও ফাহাদের মন গলাতে পারেনি ওই কিশোরী। পরিবারকে বলার মতো সাহসও হয়নি তার। ফলে একপর্যায়ে সম্মান রক্ষায় ভিডিওগুলো ভাইরাল না করার শর্তে ফাহাদের প্রস্তাব অনুযায়ী সিফাতের সঙ্গে মিলিত হয় এবং এবারও সবকিছু ভিডিও করে তারা। এর কিছুদিন পর ফাহাদ ফের আরেক পুরুষের কাছে যেতে বললে সে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ওই কিশোরী তার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের সব ভিডিও ইন্টারনেটে দেখতে পায়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই কিশোরী বলে, ‘আমার মতো ছয়-সাতজনের সঙ্গে ফাহাদ ও তার সহযোগীরা একই কাজ করেছে। তাদের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল করেছে। আমি তাদের কঠিন শাস্তি চাই।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিফাত ছাড়াও ফাহাদের এসব অনৈতিক কাজে তার চাচাতো ভাই সামিন ও বন্ধু আশিক জড়িত।
ডিবির হাতে গ্রেপ্তার সিফাত দেশ রূপান্তরকে বলে, ‘ফাহাদ অনেক মেয়েকে দিয়ে একই কাজ করাচ্ছে। আমি নিজে ছয়জনের সঙ্গে মিলিত হয়েছি। কয়েকজন ছেলেও আছে যারা ফাহাদের কথায় মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা করছে। ফাহাদ ছোটবেলা থেকেই এমন। কানাডা গিয়ে পার পেয়ে গেছে।’
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে উঠতি বয়সী মেয়েরা প্রায়ই এমন প্রতারণার শিকার হচ্ছে। অনেকে অসাবধানতাবশত নিজের ছবি বন্ধুকে দিচ্ছে। পরে সেগুলো ভাইরাল হলে সে সমাজের কাছে খুব নিগৃহীত হচ্ছে।’ অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেন নিজের ছবি নিয়ে ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার না হয়, সে বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে; বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে ছবি ও বার্তা আদান-প্রদানে সতর্কতা জরুরি। সাইবার অপরাধে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। সুতরাং ছেলেদেরও সাবধান হতে হবে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। এমনকি বিদেশে বসেও এসব অপকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’