দৈনিক প্রবাহবার্তা প্রতিবেদন : বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এই রেজিস্ট্রার্ড গ্রাজুয়েটদের নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসতে হয়। নির্বাচিত ক্যাটাগরিতে ২৫ জন সাবেক শিক্ষার্থী সিনেটের সদস্য হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে নির্বাচিত ক্যাটাগরি ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি এবং ২৫ জন রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট সিনেটের সদস্য হয়ে থাকেন। এছাড়া, সরকার কর্তৃক মনোনীত পাঁচ জন সরকারি কর্মকর্তা, সিন্ডিকেট কর্তৃক মনোনীত পাঁচ জন গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধি, অ্যাকাডেমিক পরিষদ কর্তৃক মনোনীত অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজগুলোর পাঁচ জন অধ্যক্ষ ও ১০ জন শিক্ষক এবং ডাকসু কর্তৃক মনোনীত পাঁচ জন ছাত্র প্রতিনিধি সিনেটের সদস্য হন। আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন। আগামী ১৮ মার্চ ঢাকায় এবং ৪,১১ ও ১৪ মার্চ ঢাকার বাইরে গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এতে ভোট দেবেন সর্বমোট ৬০ হাজার ২৫৯ জন ভোটার। গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হিসেবে সর্বমোট ৬৮ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। এবারের নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী গ্রাজুয়েটরা পূর্ণ প্যানেলে অংশ নিতে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে নেই বিএনপিপন্থীদের প্যানেল। আর প্রথমে প্যানেল দিলেও পরে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতপন্থী গ্রাজুয়েটরা। জামায়াতপন্থী ২৫ জন নির্বাচন বর্জন করায় এবং পরবর্তীতে স্বতন্ত্র আরও দুজন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় এখন প্রার্থী আছেন ৪১ জন। উক্ত ৪১ জনের মধ্যে এবং আওয়ামীপন্থী গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষদের বাহিরে স্বতন্ত্র একটি প্যানেল নিয়ে এবারের নির্বাচনে চমক নিয়ে আসছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করা ‘টিম অপরাজেয়’।নয় জনের একটি প্যানেল এই ‘টিম অপরাজেয়’। নানান সমস্যার সমাধান এবং র্যাংককিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার সংকল্প নিয়ে তারা তাদের ইশতেহার সাজিয়েছেন। আইনজীবী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত এই প্যানেলে আছেন— সিএফসি’র সিইও মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার কামরুন এন মাহমুদ দীপা, আইনজীবী এস কে গোলাম মাহমুদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম, আলোকচিত্রী শেখ ইয়ার আহমেদ (পিয়ারু), এনআরবিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান, সৈয়দ এ মুমেন, আইনজীবী জাকির হোসেন খান এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস এম মুজাহিদুল ইসলাম। এদের মধ্যে সাতজনই নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা নিয়ে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে আছে আফসোস। বিশ্ব র্যাং কিংয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থানের পাশাপাশি উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ এবং দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরির প্রসঙ্গেও আছে নানান সমালোচনা। একদিকে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির পরিমাণ যেমন কমে আসছে, অন্যদিকে স্থানীয় বর্তমান শিক্ষার্থীদের মনে স্নাতক পরবর্তী গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে দেখা দিচ্ছে হতাশা। ‘টিম অপরাজেয়’ তাদের ইশতেহার সাজিয়েছে এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে। ইশতেহারে নানান অসঙ্গতির সমাধানের কথা বলার পাশাপাশি বিশ্ব র্যাংনকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা। ‘টিম অপরাজেয়’ এর মুখপাত্র হিসেবে মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, “ নির্বাচিত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি, ক্যালটেক, স্ট্যানফোর্ড, যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উত্তম চর্চাগুলো বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সেরাদের তালিকায় নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা থাকবে তাদের। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান বড় একটি সমস্যা আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করবেন তারা। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর আবাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক হল নির্মাণ এবং পুরাতন হলগুলোকে আধুনিকায়ন করে পরিবেশবান্ধব আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতেও কাজ করবে এই প্রার্থীরা। এছাড়া, শিক্ষকদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত নিশ্চিত, শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা, চাকুরি মেলার আয়োজন, ক্যারিয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রেডিট এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থা, মানসম্মত হাসপাতাল-ব্যায়ামাগার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার কথা জানিয়েছেন তিনি।