দৈনিক প্রবাহবার্তা প্রতিবেদন : নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) টালমাটাল অবস্থার মধ্যে থাইল্যান্ডে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ সরকারের প্রশংসা ও বিএনপির কড়া সমালোচনা করেছেন। পার্টির ঐক্যের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ বলেছেন, জি এম কাদেরসহ দলের সবার সঙ্গে আলোচনা করে ভুল–বোঝাবুঝির অবসান ঘটানো হবে। আমি আবারও বলছি, পার্টিকে বিভক্ত করার প্রশ্নই ওঠে না।দীর্ঘ ৫ মাস থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতলে চিকিৎসা শেষে রোববার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২১ বিমান ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
তবে বিএনপির কড়া সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় এই নেতা বলেন, বিএনপির শাসনামলে জাতীয় পার্টি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরশাদ, আমি ও আমার নাবালক সন্তানসহ দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে ছিলেন। জাপাকে জনসভাও করতে দেওয়া হয়নি। ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে অনেক জনসভায় হামলা চালিয়ে অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই অন্ধকার দিনগুলো আমরা ভুলবো কী করে? তাছাড়া হাওয়া ভবনের দুর্নীতি অপতৎপরতা দেখেছি। বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না।
বিমানবন্দর থেকে হোটেল ওয়েস্টিনে যান রওশন। সেখানেই থাকবেন তিনি। প্রায় ১৬ মাস দেশ-বিদেশে চিকিৎসার পর অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন জানিয়ে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন ঠিক আছি। আমার পায়ে কিছু সমস্যা আছে। ফিজিওথেরাপি নিচ্ছি। ব্যাংককে আমার চিকিৎসার সময় সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসকেও ধন্যবাদ জানাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সময় সহায়তা ও সহযোগিতার জন্য।
জাপার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ বলেন, আগেও বলেছি, আজও বলছি-আমি সব সময়ই জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই। সবাই জানেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা কত কষ্ট সহ্য করেছি। দলকে বিভক্ত করার প্রশ্নই উঠে না। বরং জাতীয় পার্টির সব সদস্যকে খোলা মনে আহ্বান জানিয়েছি-যারা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জু ও কাজী জাফর আহমদের সঙ্গে চলে গেছেন এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন, তারা দলে ফিরে আসুন।
তিনি বলেন, ১৯৯১ হতে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কঠিন ও প্রতিকূল সময় ছিল। যারা ওই সময় সঙ্গে ছিলেন, তাদের যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে। দলের সব এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং অন্যান্যদের সঙ্গে বসব। বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবঝি দূর করব। ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে পারবে জাতীয় পার্টি।
রওশন এরশাদ দাবি করেন, দলকে দুর্বল করতে কিছু ষড়যন্ত্র হতে পারে। যেমন হয়েছিল ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়ে।
আগেই জানানো হয়েছিল রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দেবেন রওশন এরশাদ এ বিষয়ে তিনি বলেন, এরশাদের পছন্দের যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীকেই লাঙ্গলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হবে।
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে রওশন বলেন, মনে রাখবেন রংপুর জাতীয় পার্টির প্রাণ। এটা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাড়ি। তাই আসনটি যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে। জাতীয় পার্টির প্রতীক ‘লাঙল’ নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হবে এমন যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবো।
তবে রওশনের লিখিত বক্তব্যে, জাপার প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নাম ছিল।
রওশন এরশাদের সঙ্গে তার ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ, পুত্রবধূ মাহিমা সাদও দেশে ফিরেছেন। বিমানবন্দরে আরও উপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, নাসরিন জাহান রত্না এমপি, রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ ও জাপা থেকে বাদ পড়া নেতারা।