দৈনিক প্রবাহবার্তা ক্রীড়া প্রতিবেদন : গত ২৬ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতার সেন্ট জেমস স্কুল অডিটোরিয়ামে -মাদার তেরেসার ১১২তম জন্মদিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্রীড়াপ্রেমী তরফদার মো. রুহুল আমিনকে ২৩তম আন্তর্জাতিক মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ক্রীড়াজগতে বিশেষ অবদানের জন্য এ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে তাকে।সম্মাননা তার হাতে তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাজ্যপাল জাস্টিস শ্যামল । পুরস্কার হিসেবে তরফদারের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি মানপত্র, মাদার তেরেসার ছবিসহ স্মারক, কলকাতার নানাবিধ মিষ্টি ও উত্তরীয়। সেদিন সম্মাননা গ্রহণ করে তরফদার বলেছিলেন, মাদার তেরেসার নামাঙ্কিত এ পুরস্কার পেয়ে আমি গর্বিত। এটা অনুভব করার মতো বিষয়। মাদার তেরসার মতো একজন ব্যক্তির নামাঙ্কিত সম্মননা পেয়ে আমি আনন্দিত।
২৩তম আন্তর্জাতিক মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের মধ্যে এদিন উপস্থিত ছিলেন- জাস্টিস শ্যামল সেন, লেফট্যানেন্ট জেনারেল রানা প্রতাপ কালিটা, কলকাতাস্থত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের ভিসা প্রধান মহম্মদ বশির উদ্দিন, প্রেস সচিব রঞ্জন সেনসহ বিশিষ্টজনেরা।
একইসঙ্গে এদিন এ সম্মাননা পান কলকাতার ইন্দ্রজিত দাশগুপ্ত, ব্রততী ভট্টাচার্য সত্যজিত ব্যনার্জী (প্রশাসনিক), রাচেল ইলিয়াস, হার্সিদ চোকানি (শিক্ষা), ডা. সুমিত পোদ্দার (ফিজিশিয়ান), অঞ্জন বোস (মিডিয়া), প্রদীপ কুমার হাজরা (শিল্পপতি)সহ ভারতের বিভিন্ন জগতের বিশিষ্ট জনেরা ।
ক্রীড়াঙ্গনে এমন বিরল সম্মাননা স্মারকটি (২৩তম আন্তর্জাতিক মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনের রূপকার শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালকে উৎর্সগ করলেন তরফদার রুহুল আমিন ।
জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন ফোরামের ব্যানারে আজ বৃহস্পতিবার শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তরফদার রুহুল আমিনকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। যেখানে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সকলেই উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে এক ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেন জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন ফোরামের সভাপতি এবং বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনূর।
মাদার তেরেসা পুরস্কার প্রাপ্তি নিজের একার নয় বাঙালি জাতির অর্জন বলে মন্তব্য করেন তরফদার রুহুল আমিন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি যে সম্মাননা পেয়েছি মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কার এটা আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনের রূপকার, স্বাধীনতা পরবর্তী যুবসমাজকে যিনি সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন; ১৯৭৫ সালের কালরাতে যিনি ঘাতকের বুলেটে শাহাদাত বরণ করেছেন সেই ক্রীড়া সংগঠক ক্যাপ্টেন শহীদ শেখ কামালকে এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি। ওনার নামে এটা আমি দিয়ে যাচ্ছি। যেদিন আমি এই পুরস্কার পেয়েছি সেদিনই আমার মনের মধ্যে এটা ছিল যে পুরস্কারটি ক্যাপ্টেন শেখ কামালকে উৎসর্গ করব। আমাদের দেশ যদি স্বাধীন না হতো; শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের মতো সংগঠক যদি না থাকতেন তাহলে আমাদের ক্রীড়াঙ্গন কিছুতেই এগুতে পারত না।’
অনুষ্ঠানে তরফদার রুহুল আমিন আরো বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠান আয়োজন দেখে সত্যিই আমি অভিভূত, আনন্দিত। এতটাই আনন্দিত যে ভাষায় প্রকাশের নয়। আপনাদের উপস্থিতি দেখে আমি বাকরুদ্ধ। একটা কথাই বলতে চাই, আজকে ক্রীড়াঙ্গন কিন্তু এক জায়গাতে এসে দাঁড়িয়েছে। ক্রীড়াঙ্গন সব সময়ই এক জায়গাতেই ছিল। ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন সেক্টরে যারা কাজ করছেন; দীর্ঘদিন ধরে অবদান রেখে যাচ্ছেন- সকলে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন ধরে খেলাধুলাকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছি এবং আজকের যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আমাকে যে মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে আসলে এই অ্যাওয়ার্ড আমার একার না। আপনাদের সকলের, বাঙালি জাতির অ্যাওয়ার্ড এটা। আমি শুধু এটা ভারত থেকে বহন করে নিয়ে এসেছি মাত্র। বাঙালি জাতি এটার জন্য গর্বিত। আপনারা যারা ক্রীড়ার সঙ্গে আছেন এবং আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে এক সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি- এটা আপনাদের সকলের প্রাপ্য। এখানে যারা মিডিয়ার ভাই-বোনেরা আছেন তারাও এটার দাবিদার।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্রীড়া সংগঠকদের মিলনমেলার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ), কাবাডি, আরচারি, অ্যাথলেটিকস, জুডো, কারাতে, বক্সিং, সাঁতার, দাবা, ভলিবল, হ্যান্ডবল, ভারোত্তোলন, উশু, খো খো, রেসলিং, বাশাআপ, মহিলা ক্রীড়া সংস্থাছাড়াও বিভিন্ন জেলার ডিএফএ;র সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকগণ, সাবেক ফুটবলার, ক্লাব কর্তাগণসহ ক্রীড়াঙ্গনের সর্বস্তরের কর্তাব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথি বিওএ’র মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, ‘ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতির জন্য তরফদার রুহুল আমিন নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন ফেডারেশনের জন্য কাজ করছেন। ওনি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) একজন কাউন্সিলর। এটা যেমন ক্রীড়াঙ্গনের জন্য; তেমনি আমাদের বিওএ’র জন্যও গর্বের।’
আমন্ত্রিত অতিথি কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি কাবাডি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ওনাকে অভিনন্দন জানাই, শ্রদ্ধা জানাই। এটা শুধু ওনার একার প্রাপ্তি নয়; এটা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রাপ্তি। বাঙালি জাতির প্রাপ্তি। ক্রীড়াঙ্গনের জন্য অনেক কাজ তিনি করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন থেকে অনেক আগেই ওনাকে সম্মান জানানো উচিত ছিল।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত তরুণ সংগঠক এবং সাইফ পাওয়ারটেকের অন্যতম পরিচালক তরফদার রুহুল সাইফ বলেন, ‘এটা শুধু বাবার একার সাফল্য নয়; এটা পুরো ক্রীড়াঙ্গনের সাফল্য। ওনার ছেলে হিসেবে অবশ্যই গর্ববোধ করি। আমি তরফদার মো. রুহুল আমিন সাহেবের ছেলে এটা অনেক গর্বের। আমার বাবা অনেকদিন ধরে ক্রীড়াঙ্গনে কাজ করে যাচ্ছেন। সাথে সাথে আমিও কাজ শুরু করেছি। আমি অবশ্যই আমার বাবার পথ অনুসরণ করব। বাবা মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন; আমিও চেষ্টা করব আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে এভাবে যেন সাফল্য আনতে পারি।’চট্টগ্রামের বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সুপরিচিত ক্রীড়া সংগঠক সিরাজ উদ্দিন মো. আলমগীরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফোরামের সভাপতি বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনূর বলেন, ‘আমরা ক্রীড়াঙ্গনে একজন পথপ্রদর্শককে অনুসরণ করে সামনে এগুবো। তরফদার রুহুল আমিন হলেন আমাদের সেই পথপ্রদর্শক। সে আমাদের ক্রীড়াঙ্গনেকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে। মাদার তেরেসা কোনো ছোট পুরস্কার নয়। এটা আন্তর্জাতিক পুরস্কার। এটার গুরুত্ব অনেক।’
অনুষ্ঠানে আরচারির সাধারণ সম্পাদক রাজিব উদ্দীন আহমেদ চপল বলেন, ‘আমাদের প্রিয় ভাই বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক তরফদার রুহুল আমিন মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। ওনি পুরস্কার পেয়ে আমাদের গর্বিত করেছেন; ক্রীড়াঙ্গনকে গর্বিত করেছে। দোয়া করি ওনি বিশ্বব্যাপী আরো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হোক।
ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বর্ষীয়ান ক্রীড়া সংগঠক আশিকুর রহমান মিকু বলেন, ‘তরফদার রুহুল আমিন ক্রীড়াঙ্গনকে জাগ্রত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তার অনন্য অবদান আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তার মাদার তেরেসা পুরস্কারপ্রাপ্তিতে আমরা গর্বিত। তরফদার রুহুল আমিন সুইমিং ফেডারেশন, দাবা ফেডারশন, ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।’
অনুষ্ঠানে সুইমিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোল্লাহ এম বি সাইফ বলেন, ‘তরফদার রুহুল আমিন আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য অনেকদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। ওনার আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্তিতে আমরা গর্বিত। আমাদের সুইমিং ফেডারেশনের জন্য ওনি অনেক কাজ করেছেন। ওনার কারণেই সুইমিংয়ে তৃণমূলে অনেক কাজ হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা এবং বাশাআপের সভাপতি শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান বলেন, ‘ওনার মতো ক্রীড়া সংগঠক বাংলাদেশে বিরল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে জানাতে চাই তরফদার রুহুল আমিনকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত করা হোক।’
প্রসঙ্গত, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চট্টগ্রাম আবাহনীর সহসভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন করোনাকালে দেশের ৬৪ জেলা, ১০০ ক্লাব এবং প্রায় এক হাজার ফুটবলারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।