প্রবাহবার্তা : অনেক হতাশা থেকে লিখছি। অধিকার, ন্যায় বিচার, স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় পূর্ব বাংলা ও পরে বাংলাদেশের সংস্কৃতি চর্চাকারীরা অন্তত ৪০ থেকে ৯০ এর দশক পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। আমার অগ্রজ সতীর্থরা অনুজ সাংস্কৃতিক কর্মীরা যেমন এর অংশীদার, আমার মত সাংস্কৃতিক কর্মীরা ৮৭-৯০-এর দশকে সেরকমই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রত্যক্ষ কর্মী। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে, ২০১০-এর দশকে পর যে ঘটনাগুলো দেশ-জাতিকে আন্দোলিত করেছে – যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, গণ জাগরণ মঞ্চ, দেশের নানা স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, জঙ্গি হামলা, পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতা, হেফাজত-এর জামাতি লেবাস – এগুলোর পাশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন খণ্ডিত ও নিষ্প্রভ। হাতে গোণা যারা মাঝে মাঝে ঢাকা বা বড় শহরের প্রাণকেন্দ্রে গান-কবিতা পাঠ-নাটক-নৃত্যের মাধ্যমে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন,তেমনই আমাদের সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত ঝিনাইদহেও| তা তাৎক্ষণিক আনুষ্ঠানিকতায় সীমিত। প্রত্যন্ত অঞ্চলে তেমন কোন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের খবর পাই না। আমি নিজে সাম্প্রতিক বিষয়াবলী নিয়ে মঞ্চ ও খোলা যায়গায় নাটক নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম। গত ২-৩ বছরে কোন উদ্যোগী ও সাহসী নাট্যকর্মী পাইনি। যে কয়জন সমর্থন দিয়েছেন, তারা হয় আমার সতীর্থ বা সামান্য অনুজ – তারাও বলেছেন তারা নেপথ্যের কাজে সহায়তা করবেন। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা, কার্যকারিতা কি শেষ?? সাহসী সাংস্কৃতিক কর্মী নেই যারা সেইফ জোনের বাইরে গিয়েও সাংস্কৃতিক চর্চা করবেন? শুধুই শিল্পের জন্য শিল্প চর্চা হবে? হয়তো এখানে অনেকে অনেক মন্তব্য করবেন, তবে আমি চাইবো সাংস্কৃতিক কর্মীরা শুধু ফেসবুকে নয়, ফেসবুকে শুধু নিজের জাহেরি, ক্ষমতা প্রদর্শনী, নেতাদের দালালী, একে অন্যের নামে কুৎসা রটোনা,আর নয়! সেটাই আজ বেশ ভাবতে হচ্ছে, এটা শুধু ঝিনাইদহের চিত্র নয়,এটা সারা বাংলার চিত্র, কিছু সাংস্কৃতিক নেতা মুখোশ পরা সাইনবোর্ড,কোন কর্মকাণ্ড নেই বছরের পর বছর, কিন্তু সরকারি অনুদান বা অন্য বেসরকারী অনুদান নিয়ে চলছে ব্যাক্তিগত জীবন, তরমা ঝুলানো সাংস্কৃতিক কর্মীর সাইনবোর্ড ,কিছু সুবিধা বাদীদের জন্য, সাংস্কৃতিক মুল আন্দোলন আজ অন্য পথে…..একটা রাজনৈতিক দলের আদর্শের চেয়ে সাংস্কৃতিক আদর্শ বা আন্দোলন অনেক বড়, অনেক গর্বের বিষয়, রাজনীতি হয়তো যে কেউ করতে পারে তবে সংস্কৃতি আন্দোলন বা কর্মী যে কেউ করতে পারেনা,হতে পারেনা …..পারেনি কোন কালেই, ইতিহাস সাক্ষী সাংস্কৃতিক কর্মীরাই সকল আন্দোলন, মানবিক মূলবোধ প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছে…..কিন্তু আজ আমরা সবাই দালাল হচ্ছি, নিজের অস্তিত্ব ভুলে নয়, শুধু একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হয়ে দেশ, গণমানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হই, হই একজন শুধুই সাংস্কৃতিক কর্মী, একটা বিষয় মনে রাখা খুব জরুরি আমাদের সামাজিক, রাষ্ট্রিয় ,গণমানুষের ও প্রকৃত বাঙালি সংস্কৃতি বাঁচতে আমরা দ্বায়বদ্ধ! হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি লালন ও পালন আমাদের মুল পাথেয়, লোক সংস্কৃতির মাঝে মানবতাবাদ নিহিত, এটা ভূলে গেলে চলবে না! তবে হয়তো আমার মনে হয় বিনোদনের সংস্কৃতিকে একমাত্র শিল্পকর্ম মনে করে অনেকেই আমরা ভূল করছি।সাংস্কৃতিক চর্চা কে বানিজ্যিক রুপ দিচ্ছি, আমাদের- সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রতি মানুষের আস্হা তৈরী করতে হবে তবেই মানুষ আমাদের কথা গ্রহন করবে।তা নাহলে রাজনৈতিক নেতাদের যে অবস্হা আমাদেরও তাই হবে। মানুষ যেমন রাজনৈতিক নেতাদের কথা আর আগের মতো বিশ্বাস করতে চাইনা! সাংস্কৃতিক চর্চার বা সৃষ্টির মাধ্যমে আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন বা খুঁজবেন। যদি তেমন তাগিদ অনুভব করেন। ভুল হলে ভুল বুঝবেন না প্লিজ……
লেখক : শামীম আহমেদ টপি সভাপতি, বিল্পবী বাঘা জতিন থিয়েটার।