প্রবাহবার্তা : একটা বাংলা সিনেমার গান ওঁত পেতে থাকা শেয়াল শকুন ওঁত পেতে থাকা হয়না, ধংসের খেলা খেলে যায় ওরা সমাজের ভালো চায় না, তাদের জন্য আমাদের আজ সর্তক চোখ রাখা, স্বাধীন দেশে উড়বেই দেখ স্বাধীন পতাকা। গানটির লাইন গুলো এই কারনেই উল্লেখ করা কারণ দল হিসাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মধ্যে এমন ওঁত পেতে থাকা লোকেদের অভাব নেই। লাল সবুজের পতাকা টা স্বাধীন ভাবে উড়াতে গেলে এই সকল বেইমানদের দল থেকে তাড়াতেই হবে। আমি বলছি বিশ্বাস ঘাতক খন্দকার মোস্তাকের কথা। তার জীবনী টা একটু চলেন পর্যালোচনা করি। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশ নতুনত্বের চিন্তায় ও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বির্নিমানের চিন্তায় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন। এই দলে কারারুদ্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও যুগ্ম সম্পাদক হয়েছিলেন। কিন্তু ওই বছরের ১১ অক্টোবর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াবজাদা লিয়াকত আলী খানের আগমন উপলক্ষে ‘গভর্নর হাউজ’ ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী মুসলিম লীগ। কর্মসূচি চলাকালীন গ্রেপ্তার হন দলের সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং পরে শেখ মুজিব। ভয়ে পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে দল ত্যাগ করেন অন্যতম সহ-সভাপতি ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের তৎকালীন সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন,দলের অন্যতম নেতা আলী আমজাদ খান ও সহ-যুগ্ম সম্পাদক এ কে রফিকুল হোসেন। এই অবস্থায় যুগ্ম সম্পাদক মোশতাক রাজনীতির পাট চুকিয়ে আইন ব্যবসায় শামিল হন সিনিয়র সহসভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খানের সঙ্গে।লক্ষ করুন মোস্তাক দলের প্রয়োজনের সময় পাসে না থেকে বরং ভয়ে পালানো কর্মী এমন কর্মী কিন্তু এখনো আছে সুতরাং মোস্তাকদের এভাবেই চিনতে হবে ।১৯৫০ সালে কারামুক্ত শেখ মুজিব আওয়ামী মুসলিম লীগের অফিস খুলে বসেন নবাবপুরে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে শেখ মুজিব দলীয় কার্যক্রম শুরু করলেও মোশতাকের হদিস ছিল না। মোস্তাক ধারণা করেছিল হয়তো ভাষানী মুজিব আওয়ামী মুসলিম লীগ টিকবে না ফলে তিনি দুরে দুরে থাকতেন । ফলে ‘১৯৫৩ সালের প্রথম কাউন্সিলে নির্বাচিত কমিটিতে তার ঠাঁই হয়নি বিশ্বাস ঘাতক খন্দকার মোস্তাকের । ’১৯৫৪ সালের মার্চের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হন মোশতাক। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিশেষ অনুকম্পায় তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী করে আনা হয়। আওয়ামী লীগও তাকে ফিরিয়ে নেয়। আওয়ামী মুসলিম লীগ যুক্তফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে এলেও গভর্নর শেরেবাংলার একে ফজলুল হকের দলে গা ভাসান এবং চীফ হুইপ হন। প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি দলে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে কয়েকবার দল পাল্টান এবং সর্বদাই সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ নীতিতে। ১৯৫৫ সালে দল অসাম্প্রদায়িক নীতিগ্রহণ করে নাম থেকে “মুসলিম” শব্দ কর্তন করলে খুনি মোশতাক আব্দুস সালাম খানের( কর্ণেল (অবঃ) ফারুক খানের বাবা) সঙ্গে হাত মেলান এবং আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে দল টিকিয়ে রাখেন। এর মাধ্যমে মোস্তাক আবারও প্রমাণ করেন তিনি সুবিধা বাদি। এর কিছু দিন পর তারা আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকেও বহিষ্কার হন।ঐ সময় যারা আওয়ামী মুসলিম লীগ টিকিয়ে রেখেছিল তারাও বুঝতে পরেছিল মোস্তাক কি জিনিস । পরে মোশতাক আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালে মুজিব নগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোশতাক পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন গঠনের চক্রান্তের দায়ে অভিযুক্ত হন। হারান মন্ত্রীত্ব। আর সেই মধুর প্রতিশোধ নেন ৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় চারনেতাকে হত্যা করে। রাষ্ট্রপতির ভাষণে মোশতাক বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ‘দেশের সূর্য সৈনিক’ হিসাবে অভিহিত করেন। তিনি মাত্র কদিন আগে বঙ্গবন্ধুর পিতার মৃত্যুতে যে পরিমাণ কান্নাকাটি করেন বঙ্গবন্ধুর অতিঘনিষ্ট হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেন। তার সময়ে কুখ্যাত ইনডিনিনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয় যা শহীদ জিয়াউর রহমান পরবর্তীতে আরও পাকাপোক্ত করেন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরির মাধ্যমে। ১৯৭৬ সালে মোশতাক আহমেদ ডেমোক্র্যাটিক লীগ নামক এক নতুন দল প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছর সামরিক শাসককে অপসারণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ২টি দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয় এবং আদালত তাকে ৫ বছরের শাস্তি প্রদান করে। জেল থেকে মুক্তিলাভের পর তিনি আবার সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন। আওয়ামী লীগ একুশ বছর পর ৯৬ সালে ক্ষমতায় ফিরে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার কার্য শুরু করে। কিন্তু মাত্র কদিন আগে ৯৬ সালের ৫ মার্চ মোশতাক মারা যান। মৃত্যুর পর পুলিশ পাহারায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে মোশতাকের নামাজে জানাজা হওয়ার কথা থাকলেও বিক্ষোভের মুখে তা সম্ভব হয়নি। কুমিল্লার দাউদকান্দির দশপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে মোশতাককে দাফন করা হয়। এরাই মোস্তাক। এমন মোস্তাক এখনো দলে আছে থাকবে কিন্তু তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে তবেই সুরক্ষিত হবে দেশ ও লাল সবুজের পতাকা।
লেখক : বেদুইন হায়দার লিও বঙ্গবন্ধু গবেষক ও আওয়ামী লীগের তৃনমূল কর্মী