স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করা কিশোরীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেল পুলিশ

স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করা কিশোরীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেল পুলিশ

এম এ আশরাফ, বিশেষ প্রতিনিধি: ভোলার লালমোহনে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করা কিশোরীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেল পুলিশ। এমনি অভিযোগ উঠেছে লালমোহন থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। গত বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোলার লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নে শান্তর বাড়িতে গিয়ে অনশনে বসে এ্যানি আক্তার। বিয়ে না করেও বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করে তাকে ধর্ষণ করায় স্ত্রীর মর্যাদা পেতে শান্তর বাড়িতে সে এই অনশন করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে লালমোহন থানা পুলিশ শান্তর বাড়ি থেকে এ্যানিকে টেনেহিঁচড়ে  লালমোহন থানায় নিয়ে যায়। রাতভর লালমোহন থানায় থাকার পর বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লালমোহন থানার ওসি এ্যানিকে ভোলা কোর্টে প্রেরণ করেন। রাত ৮টার দিকে এ্যানির মামা ওবায়দুল হক এ্যানিকে কোর্ট থেকে নিয়ে যায়। অনশন করা এ্যানির বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের লক্ষণকাঠী গ্রামে। শান্ত ভোলার লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের তালপাতার হাট ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাঁর বাবা শাহাবুদ্দিন মাষ্টার স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এ্যানি ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালে চাকুরী করে। সে সুবাদে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় একটি ভাড়াটিয়া বাসায় ফুফুর সঙ্গে থাকত। আর শান্ত মোহাম্মদপুর আলহাজ্ব মুকবুল হোসেন ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করত। সে সুবাদে কলেজ সংলগ্ন এলাকায় একটি ভাড়াটিয়া মেসে বন্ধুদের সঙ্গে থাকা হতো তাঁর। উল্লেখ্য ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি লেকে ঘুরতে যায় এ্যানি আক্তারসহ তাঁর তিন বান্ধবী। সেখানেই তাদের সঙ্গে পরিচয় হয় শান্ত নামে এক ছেলের সঙ্গে। তখন শান্তর সঙ্গে হৃদয়সহ তাঁর দুই বন্ধু ছিল। পরিচয়ের একপর্যায়ে লেক এলাকার একটি চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে তাঁরা খাওয়া-দাওয়া করে। এরপর শান্তর সঙ্গে এ্যানির নিয়মিত যোগাযোগ চলে। এ্যানির সঙ্গে শান্তর পরিচয়ের একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে শান্ত। সম্পর্কের বেশ কয়েকমাস অতিবাহিত হওয়ার পর শান্ত বিয়ের কথা বলে কৌশলে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা নিয়ে যায় এ্যানিকে। ২০২২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সদরঘাট থেকে এমভি সুন্দরবন-১০ লঞ্চের কেবিনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে এ্যানিকে বরিশাল নিয়ে যায়। শান্ত লঞ্চের কেবিনে এ্যানির ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি কুয়াকাটার দি রয়েল নামে একটি হোটেলে তাঁর সঙ্গে রাত্রিযাপন করে। ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে শান্ত জানায়, সঙ্গে করে সে তাঁর ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে আসেনি। সেজন্য এমুহূর্তে সে বিয়ে করতে পারছে না। এ কথা বলে কুয়াকাটা থেকে বাসযোগে এ্যানিকে নিয়ে সে ঢাকায় চলে যায়। ঢাকা যাওয়ার পর তাদের দু’জনের মধ্যে একসপ্তাহ কোনো যোগাযোগ হয়নি। এরপর শান্ত আবারও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিয়ে করতে স্বর্ণালংকার কিনতে হবে, ‘এ কথা বলে এ্যানির কাছ থেকে কয়েক ধাপে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। ২০২২ সালের এপ্রিলে এ্যানিকে নিয়ে সে আবারও মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার তাজমহল নামে একটি হোটেল গিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রাত্রিযাপন করে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর শান্তর বন্ধু হ্নদয় কৌশলে তাদের দু’জনকে আবারও কুয়াকাটা নিয়ে যায়। এসময় হ্নদয় এ্যানিকে বলেছিল, ‘তোদের দু’জনের বিয়ের সাক্ষী আমি দিমু’। এ কথা বলে কুয়াকাটার হোটেল সাব্বির খানে দুই রাত তাঁরা রাত্রিযাপন করে। হ্নদয় ওই হোটেলেরই অন্য একটি রুমে ছিল। কুয়াকাটা হোটেলে দু’দিন রাত্রিযাপন শেষে হ্নদয় তাদের দু’জনকে ঢাকায় নিয়ে সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ডে নেমে শান্তকে নিয়ে পালিয়ে যায়। বাসস্ট্যান্ডে রেখে যায় এ্যানিকে। ফেসবুকে ব্লক করে মোবাইল ফোনের সিম পরিবর্তন করে নেয় হ্নদয় ও শান্ত। এমনি অভিযোগ করে এ্যানি আক্তার। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে শান্তর ফেসবুক ফ্রেন্ডলিষ্টের এক বন্ধুর মাধ্যমে শান্তর বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে। লালমোহন থানা পুলিশের উপর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে এ তরুণী আরো বলেন, আমি খুব অসহায়ত্ব হয়ে শান্তর বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা পেতে অনশন করেছি। শান্ত আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমি তাঁর বিচার চাইতে গিয়েছি। কিন্তু শান্তর পরিবার লালমোহন থানা পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে আমাকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করেছে। পুলিশ শান্তর বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে গিয়ে আমার সঙ্গে চরম খারাপ আচরণ করেছে। আমার সঙ্গে ‘তুইতোকারি’ করে ভাষা করেছে। আমাকে ‘চরিত্রহীন’ বলে গালি দিয়েছে। লালমোহন থানার ওসি আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তাতে আমি অসন্তুষ্ট। একজন ওসির আচরণ এরকম হতে পারে না। আমি ওসির আচরণে হতভম্ব হয়ে গেছি, ভীষণ কষ্ট পেয়েছি’। ওসি আমার সঙ্গে অমানবিক জুলুম করেছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শান্তর কাছে জানতে চাইলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তাঁর পিতা শাহাবুদ্দিন মাষ্টারের ফোনে কল দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি রং নাম্বার আখ্যা দিয়ে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন৷ এরপর একাধিকবার তাকে ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি। লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুবুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘ এ বিষয়টির বক্তব্য কোর্ট পুলিশের কাছ থেকে নিন’। এ কথা বলে তিনি মোবাইল ফোনের কল কেটে দেন। এরপর তাকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

Please Share This Post in Your Social Media

শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা ছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। এ ভালোবাসা থেকেই বঙ্গবন্ধু যখন প্রাদেশিক সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল তার দূরদর্শিতায় চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন প্রতিষ্ঠার বিল আনা হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের বাংলাদেশে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি)।

সিনেমা অঙ্গনকে ভালোবেসে এদেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে আমৃত্যু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি নিজেও সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। বঙ্গবন্ধু অভিনীত সিনেমাটির নাম ‘সংগ্রাম’। ছবিটি পরিচালনা করেন প্রয়াত নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র ‘সংগ্রাম’। এতে ছোট্ট এক ভূমিকায় হাজির হয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালি। সে সময়ের চিত্রনায়ক কামরুল আলম খান খসরু ও চাষী নজরুল ইসলামের অনুরোধে ছোট্ট ওই চরিত্রে অভিনয়ে রাজি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

ছবির চিত্রনাট্যের শেষ দিকে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্য স্বাধীন দেশের সামরিক বাহিনী বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্যালুট করছে। এই দৃশ্য কীভাবে ধারণ করা যায় সে নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। একপ্রকার দুঃসাহস নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন ছবিটির নায়ক খসরু। কিন্তু বঙ্গবন্ধু প্রথমে রাজি হননি। পরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মান্নানকে দিয়ে সুপারিশ করিয়ে অভিনয়ের জন্য তাকে রাজি করানো হয়।

‘সংগ্রাম’ ছবিটিতে নাযক ছিলেন খসরু আর নায়িকা সূচন্দা। ছবিটি ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায়।

বঙ্গবন্ধু যে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন