জাতীয় দলের মেয়েদের অর্জনের ঝুলি পূর্ণ হলো বড় শিরোপায়

জাতীয় দলের মেয়েদের অর্জনের ঝুলি পূর্ণ হলো বড় শিরোপায়

দৈনিক প্রবাহবার্তা ক্রীড়া প্রতিবেদক :  কবি নজরুলের চিরসত্যের মতো কানে বাজা উক্তিটাই যেন মিথ্যা করে দিলেন কৃষ্ণা সরকাররা। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ফুটবলে ‘যা কিছু মহান’ তার অর্ধেক নয় প্রায় সবটা অর্জনই নারী দলের। বয়স ভিত্তিকের মতো এবার জাতীয় দলের মেয়েদের অর্জনের ঝুলি পূর্ণ হলো বড় শিরোপায়। স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নারী সাফে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।

কটাক্ষ-কটুক্তি, অভাব-অপ্রাপ্তি থামামে পারেনি বাংলাদেশের এই নারী ফুটবলারদের।  দৃঢ় কণ্ঠে স্বপ্নসারথীদের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়াই করার ঘোষণা দেওয়া সানজিদা খাতুনরা তাদের স্বপ্ন ছুঁতে পেরেছেন। যারা তাদের ফুটবল মাঠের সবুজ ছোঁয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, তাদের শিরোপা ছোঁয়ার উল্লাসে ভাসিয়েছেন।

নেপালের আকাশে শুরু থেকেই ছিল কালো মেঘের ঘনঘটা। সেই কালো মেঘ যেন এসে ভর করে দেশটির ফুটবল দলের ওপরও। তার ওপর আবার বৃষ্টিতে ভিজে মাঠ পুরোই কর্দমাক্ত। তাতেও বাংলাদেশ এগিয়েই ছিল। তবে খেলা শেষ হতে যখন মাত্র ২০ মিনিট বাকি, তখনই যেন বাংলাদেশের দর্শকদের মনে উঁকি দেয় শঙ্কার মেঘ। অনিতা বাসেন্তের দেওয়া গোলে ব্যবধান কমিয়ে ফেলে নেপাল। তাতে শঙ্কা আরও ঘনিভূত হয়। তবে ছয় মিনিট পরেই সেই শঙ্কা উড়িয়ে দেন কৃষ্ণা। তাতে শেষ বাঁশি বাজার আগেই নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ।

কৃষ্ণা রাণী সরকারের জোড়া গোলে স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ে সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। হিমালয় কন্যাদের হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনাল জিতে ইতিহাস গড়েছেন সাবিনা-শামসুন্নাহাররা।কাঠমুন্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বিকেল সোয়া ৫টায় শুরু হওয়া ফাইনালের ১৪ মিনিটেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্নাকে নিয়ে শঙ্কা ছিল। সে শঙ্কা কাটিয়ে তাকে নামানো হয় প্রথম একাদশে। কিন্তু কাদায় পড়ে ১০ মিনিটের মাথায় আবার ব্যথা পেলে তাকে তুলে নেওয়া হয়। মাঠে নামানো হয় শামসুন্নাহার জুনিয়রকে। মাঠে নেমে ৪ মিনিটের মাথায় গোল করলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।

গোল হজমের পর নেপাল ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠে। কিছু সময় তারা বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তারও করে। দুইবার ভালো দুটি সুযোগও আদায় করে নিয়েছিল স্বাগতিকরা। অনেকগুলো সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের। কিন্তু শেষটা ঠিকমতো হচ্ছিল না বাংলাদেশের মেয়েদের। নেপালও অনেকগুলো সুযোগ নষ্ট করেছে।

এরমাঝে একবার গোল হজম করতে বসেছিল সাবিনারা। গোল পোস্টে লেগে বল ফিরে আসায় সে যাত্রায় রক্ষা হয়। ৩৫ মিনিটে আনিতার ফ্রি-কিক গোলরক্ষক রূপনা চাকমা ডান দিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন। ওই কর্নার থেকেই গোলমুখে জটলা হলে গোল প্রায় হজমই করে ফেলেছিল বাংলাদেশ; কিন্তু গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করে দলকে বাঁচান মাসুরা পারভীন।

তবে ম্যাচের ৪২ মিনিটে কৃষ্ণা রাণী সরকারের গোলে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় বাংলাদেশ।  শামসুন্নাহার ও কৃষ্ণার গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে স্বাগতিক নেপাল। যার ধারাবাহিকতায় ৭০ মিনিটে একটি গোল পরিশোধ করে ফেলে নেপাল। আনিতার দারুণ এক শট জড়িয়ে যায় বাংলাদেশের জালে।

তবে, ২-১ গোলকে নিরাপদ মনে করেননি বাংলাদেশের মেয়েরা। যে কারণে আরও একটি গোল আদায়ের লক্ষ্যে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে তারা। খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ৭৬ তম মিনিটেই গোল আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। কৃষ্ণা রানী সরকারের দ্বিতীয় গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৩-১ গোলের ব্যবধানে। পরের সময়টা গোলবার অক্ষত রাখার কাজটা করতেও ভুল করেনি কোচ গোলাম রাব্বানি ছোটনের দল।

আর তাতেই প্রথমবারের মতো নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা হয়ে যায় বাংলাদেশের। ২০০৩ সালে রজনীকান্ত বর্মনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ছেলেরা প্রথম সাফ জয় করেছিল। দেড় যুগ পর দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ফের বাংলাদেশের হলো।

বিবেকানন্দের বিখ্যাত উক্তি, ‘আগামী পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত জন্মভূমিই হোক তোমাদের একমাত্র উপাস্য দেবতা।’ ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বৈষম্য ভুলে জন্মভূমিই একমাত্র উপাস্য হলে এসব শিরোপার অপেক্ষা হয়তো পঞ্চাশ বছরে ঠেকত না। সানজিদাকে লিখতে হতো না, ‘টিপ্পনী একপাশে রেখে যে মানুষগুলো সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। এই সাফল্য হয়তো নতুন সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।’

Please Share This Post in Your Social Media

শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা ছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। এ ভালোবাসা থেকেই বঙ্গবন্ধু যখন প্রাদেশিক সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল তার দূরদর্শিতায় চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন প্রতিষ্ঠার বিল আনা হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের বাংলাদেশে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি)।

সিনেমা অঙ্গনকে ভালোবেসে এদেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে আমৃত্যু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি নিজেও সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। বঙ্গবন্ধু অভিনীত সিনেমাটির নাম ‘সংগ্রাম’। ছবিটি পরিচালনা করেন প্রয়াত নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র ‘সংগ্রাম’। এতে ছোট্ট এক ভূমিকায় হাজির হয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালি। সে সময়ের চিত্রনায়ক কামরুল আলম খান খসরু ও চাষী নজরুল ইসলামের অনুরোধে ছোট্ট ওই চরিত্রে অভিনয়ে রাজি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

ছবির চিত্রনাট্যের শেষ দিকে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্য স্বাধীন দেশের সামরিক বাহিনী বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্যালুট করছে। এই দৃশ্য কীভাবে ধারণ করা যায় সে নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। একপ্রকার দুঃসাহস নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন ছবিটির নায়ক খসরু। কিন্তু বঙ্গবন্ধু প্রথমে রাজি হননি। পরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মান্নানকে দিয়ে সুপারিশ করিয়ে অভিনয়ের জন্য তাকে রাজি করানো হয়।

‘সংগ্রাম’ ছবিটিতে নাযক ছিলেন খসরু আর নায়িকা সূচন্দা। ছবিটি ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায়।

বঙ্গবন্ধু যে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন